লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ বিশ্বব্যাপী সংকটের কারণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। সময়সূচি দিয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং এবং সরকারি-বে-সরকারি অফিসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার চেষ্টা চলছে। যার ধারাবাহিকতায় লালমনিরহাটে বেড়েছে লোডশেডিং।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) বন্ধ রাখার বিধান থাকলেও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লালমনিরহাটের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফের এসি বিলাস বন্ধ হয়নি।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির টাকায় অফিসের সাজসজ্জ্বাসহ এসি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। তার অনৈতিক কর্মকান্ডে খোদ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদের ইসলাম বিরক্ত হয়ে পড়েছেন।
আরো পড়ুনঃ দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বিএনপি
অনুসন্ধানচালিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারী মাসে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন লালমনিরহাটে যোগদান করেন সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ। তিনি উক্ত অফিসে যোগদানের পর এলজিইডি অফিসে দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছে। সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এলজিইডি। সারাদেশের স্থানীয় উন্নয়নে এ প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা অগ্রণী। অথচ সেই অফিসে ওয়ার্ক অর্ডার সহ কাজ পেতে হলে ঘুষ দিতে হয়, কাজ বাস্তবায়নের সময় তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে ঘুষ দিতে হয় সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফকে। এক কথায় ঘুষ না দিলে আব্দুল মান্নাফের টেবিল থেকে কোন ফাইল নড়ে না। ফলে উন্নয়ন কাজের গুণগত মান নিয়েও চরম সংশয় দেখা দিয়েছে।
একটি বিশ^স্থ্য সুত্র জানান, লালমনিরহাট এলজিইডি ভবনের ২য় তলার একটি কক্ষে বসেন সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ। সেই কক্ষের সামনে পাহাড়াদার হিসেবে রেখেছেন পিয়ন। সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই তার অফিস কক্ষটিকে তিনি বিভিন্ন ভাবে চোখ ধা-ধা-লো হিসেবে সাজিয়েছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি)। তিনি তার অফিসটি এভাবে সাজিয়েছেন যা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদের ইসলামের কক্ষেও নেই। দরজা থাকা সত্ত্বেও থাই গ্লাস দিয়ে এমন ভাবে বানিয়েছেন যা ঘুষ আদায়ের নিরাপদ কক্ষ হিসেবে অনেকেই আক্ষা দিয়েছেন। আব্দুল মান্নাফ অত্র প্রতিষ্টানে যোগদানের পর সরকারি ভাবে তার অফিস কক্ষ সংস্কারের কোন বরাদ্দ না দিলেও তিনি কোন টাকায় করেছেন অফিস সংস্কার।
অভিযোগ উঠেছে, তিনি এসবেই করেছেন অনিয়ম ও দুর্নীতির টাকায়। যা তদন্ত করলে প্রমান মিলবে। তবে সরকারি ভাবে একজন এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী কোন ভাবেই এসি ব্যবহার করতে পারেন না। কিন্তু সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই তিনি তার অফিস কক্ষে এসি লাগিয়েছেন। তার এসি ব্যবহারে ক্ষুব্ধ স্থানীয় ঠিকাদার সহ প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অপরদিকে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফের বিরুদ্ধে নানান আলোচনা সমালোনা সৃষ্টি হয়েছে। সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফের সরকারি গাড়ি ও এসি বিলাসবহুল জীবন যাপনের আয়ের উৎস কি। এতো বিলাসবহুল জীবন যাপনের অর্থ তার বেতনের টাকায় নয়, অনিয়ম, দুর্নীতির টাকায় চোখ ধাঁ-ধাঁ-লো অফিস কক্ষসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) বসিয়েছেন। বানিয়েছেন বাড়ি-গাড়ি, নামে-বেনামে সম্পত্তিসহ কোটি টাকা। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে দুর্নীতির বড় রহস্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপিপন্থী আরেক ভুক্তভোগী ঠিকাদার বলেন, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলীকে ঘুষ না দিলে ফাইলে নড়ে না। এ কারণে ঠিকাদারি পেশা থেকে এখন সরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না। সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার দৌরাত্মে শুধুমাত্র সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যহত হচ্ছে তা নয়, সরকারের ভাবমূর্তিও নষ্ট করছে আপদমস্তক দুর্নীতি গ্রস্ত এসব অসাধু কর্মকর্তারা। আমরা আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এবিষয়ে সুদৃষ্টি দেবেন।
সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এলজিইডি লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদের ইসলাম বিষয়টি দেখছি বলে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
লালমনিরহাট/আরইসআর