তাহমিনা আক্তার,ঢাকা।। আর এক মাস পরই উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বাড়ছে মসলার দাম। এক মাসের মধ্যে চীনা আদা ২২০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা বেড়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা আদার দাম কেজিপ্রতি একশ টাকা করে বেড়েছে।
আজ শনিবার সরজমিনে রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, হাতিরপুল, রামপুরা, শান্তিনগর বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আমদানি করা চীনা আদা কেজিপ্রতি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত রমজানে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া মিয়ানমারের আদা ২৬০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে ৩৬০ টাকা, ভিয়েতনামের আদা ২০০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ার আদা ২২০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকা, দেশি আদা ২৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আদার দাম নিয়ে কথা হয় হাতিরপুল এলাকার মুদি দোকানদার শাওনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের অন্য দেশের আদার চেয়ে চীনা আদার চাহিদা অনেক বেশ। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে চীনা আদার সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে আদার দাম বেড়েছে লাগামহীনভাবে।’
শান্তিনগর বাজার এলাকার আদা ব্যবসায়ী আকাশ সরকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আদার উৎপাদন ও আমদানি কম হওয়ায় আমাদের দেশে আদার দাম বেশি। কোরবানির ঈদের আগে আদার দাম এরকমই থাকবে।’
গত একমাসে পেঁয়াজের দাম ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরা এলাকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের দেশে যে কোনো পণ্য হোক না কেন, দাম একবার বাড়লে সেই পণ্যের দাম আর কমে না। তবে ঢাকার বাইরে পেঁয়াজের দাম কমতে দেখা গেছে। কিন্তু ঢাকায় এখনও প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’
বাজারে প্রতি কেজি জিরা ৮০০ থেকে ১০০ বেড়ে ৯০০ টাকা, এলাচ তিন হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বেড়ে ৪০০০ টাকা, ধনিয়া ২০০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ২২০ টাকা, লবঙ্গ ১৫০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর গুলশান-২ এলাকার মুদি দোকানি হেলাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রাঁধুনি কোম্পানির ৫০০ গ্রাম হলুদ রমজানে ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন ২৪০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যে রসুন ১২০ টাকায় বিক্রি করেছি সেই রসুন ৫০ টাকা বেশি দামে ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া দারুচিনি ৫৫০ টাকা থেকে ৫০ বেড়ে ৬০০ টাকা, তেজপাতা ২২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ২৫০ টাকা, গুঁড়া মরিচ ২২০ টাকা থেকে ৭০ টাকা বেড়ে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, ছয় মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন জাতের মসলা কেজি প্রতি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক রাসেল আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের দেশে এবছর আদাসহ সব ধরনের মসলার কিছুটা সংকট রয়েছে। ফলে দাম বাড়তি।’
তিনি বলেন, ‘দেশে আদার চাহিদা প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে দেশে আদার উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। এবছর উৎপাদন কমে হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে হয়েছে ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মসলা নিয়ে বাজারে কোনো ধরনের অনিয়ম দেখলেই আমাদের ভোক্তা অধিকার টিম জরিমানা করছে। বাজার সিন্ডিকেট ধরার চেষ্টা চলছে। আশা করি এই সংকট খুব শীঘ্রই কাটবে।