চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে ২০২১ ব্যাচের পক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে ২০২১ এসএসসি ব্যাচের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষার্থী রায়ান উৎস। সংবাদ সম্মেলন শেষে অটোপাসের দাবিতে প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন।
করোনার কারণে গতবছরের মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এর মধ্যে অনলাইন ক্লাস হলেও অনেকে তা থেকে বঞ্চিত। করোনার ঝুঁকিতে এসএসসি পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। তবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করে তার থেকে পরীক্ষা নেবার কথা জানা গেলেও এখনো প্রকাশিত হয়নি সংক্ষিপ্ত সেই সিলেবাস।
এদিকে করোনার ভ্যাকসিন না আসা এবং ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুর খবরে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা। করোনা মহামারিতে পরীক্ষা বাতিল চেয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাব্লিক গ্রুপ খুলে তারা তাদের অভিমত প্রকাশ করছে।
সংবাদ সম্মেলনের শিক্ষার্থীদের দেওয়া লিখিত বক্তব্যটি নিচে তুলে ধরা হল-
এস এস সি ও সমমান ২০২১ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি বিষয় নিয়ে আজকের এই প্রেস ব্রিফিং। এস.এস.সি ব্যাচ ২০২১ এর পক্ষ থেকে আমি রায়ান উৎস বলছি। এস. এস.সি ২০২১ ব্যাচ এর পক্ষ থেকে আমাদের দেশের প্রধান এবং দেশের অভিভাবক আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাই সালাম, আসসালামুআলাইকুম।
আমরা সকলে একটি করুণ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এটি নিশ্চয় আপনাদের কাছে অজানা নয়। আমরা প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিল দেখে ভয়ে ভয়ে দিন যাপন করছি। হ্যাঁ, আমরা বলছি সেই মহামারি এবং সেই আতঙ্কেও কথা যার নাম কোভিড-১৯।
প্রতিদিনই আমরা দেখছি বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার পুনরায় বাড়ছে। আমাদের দেশের করোনা সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে দায়িত্ব তুলে নেন। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমাদের দেশে বেশ কিছুদিন লক-ডাউন জারি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেন।
কিন্তু ইদানীং করোনার এই ঝুঁকির মধ্যে স্কুল খুলে দেওয়ার গুঞ্জন উঠলে আমরা এস.এস.সি ২০২১ ব্যাচ নড়চড়ে বসি। তাই আমরা কিছু দাবি রাখছি আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশরত্ন ও বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
দাবিগুলো হচ্ছে-
১। আমাদের দেশে এখনও করোনায় ভ্যাকসিন আসেনি। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় বলেছেন ১৮ বছরের নিচে কাউকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। আমরা সবাই ১৮ বছরের নিচে। মনে করেন, জুনে এস.এস.সি পরীক্ষার আগে আমি কোভিড-১৯পজিটিভ হলাম। আমাকে পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমি তখন এস.এস.সি পরীক্ষা দিতে পারবো না। যেহেতু আমি কোভিড-১৯ পজেটিভ, তাহলে আমাকে কোয়ারেন্টাইনে এ থাকতে হবে। তাই বিশেষ ব্যবস্থাও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না। ফলে পরীক্ষা দিতে না পারলে আমার জীবন থেকে একটি বছর নষ্ট হয়ে যাবে। যা আমরা চাই না।
২। আমাদের স্কুল কার্যক্রম প্রায় ১১ মাস বন্ধ ছিলো। শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন যে আমাদের ৩ মাস ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু আমরা যদি চিন্তা করি, পরীক্ষা জুনে হলে, জুন মাস পুরোটা পরীক্ষাতেই চলে যাবে। জুলাই এবং আগস্ট মাস চলে যাবে আমাদের এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিতে দিতে। সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর চলে যাবে কলেজে ভর্তি হতে হতে। তাহলে আমাদের জীবন থেকে এভাবে ১টি বছর ঝরে যাবে। অর্থাৎ সেশন জট সৃষ্টি হবে। আমাদের চাকরির বয়স ৩০ বছর পর্যন্ত। যদি এস.এস.সি এর কারণে ১টি বছর নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আমাদের চাকরির বয়স চাকরির বয়স থেকে ১টি বছর ঝরে যাবে। যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই চাইবেন না। তাই আমরা সেশন জট নিয়ে করোনা ঝুঁকির মধ্যে এস.এস.সি দিতে চাই না।
৩. আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই আমাদের চাওয়া বুঝতে পারবেন। এটাই আমাদের আশা। তাই যদি আমাদের এস.এস.সি না নিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী নিকট আকুল আবেদন থাকবে যে, আমাদেরকে যেন পি.এস.সি এবং জে.এস.সি ফলাফল এর উপর ভিত্তি করে ফলাফল মূল্যায়ন করা হয়।
আমাদের দেশের অধিকাংশ অভিভাবক এই বয়সে শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্ট-ফোন দেয় না। কারণ স্মার্ট-ফোন হতে দেওয়ার মতো সামর্থ্য সকল পরিবারের থাকে না। তারাই অনলাইনে ক্লাস করতে পেরেছে যাদের পরিবার সামর্থ্য-বান, তারাই ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছে কিন্তু সে সংখ্যা খুবই কম। গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার্থী বেশি এবং সকল জায়গায় ইন্টারনেট সুবিধা সমান নয়। তাই অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়াটাও যুক্তিসঙ্গত নয়।
দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের পড়ালেখার একটি অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই জানেন একটি মোটরযান দীর্ঘদিন যাবৎ চালানোর পর যদি হুট করে বন্ধ করে দেওয়া হলে, তা পুনরায় সচল করতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের সকল এস.এস.সি ২১ ব্যাচ শিক্ষার্থীরা একটি বিনীত প্রার্থনা। প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের দেশের পরিচালক, নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন না আপনার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই মৃত্যুকৃপে এবং সংক্রমণের মিছিলের পথযাত্রী হোক। আপনি আমাদের আইডল, আপনি যেটাই করবেন আমাদের মঙ্গলের জন্য করবেন। আপনাদের পরে আমরাই দেশের হাল ধরবো। আপনার দেখানো পথে আমরাই পথযাত্রী হবো। আমরা আপনার কাছে সেই সুযোগটি চাই। আমরা বাঁচতে চাই। যদি এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে এস.এস.সি পরীক্ষা নেওয়া হয় তাহলে আমরা একটি মানসিক চিন্তায় পড়ে যাবো। আমরা সকলেই আপনার দিকে চেয়ে আছি, আমরা এই এস.এস.সি নামক দুঃচিন্তা থেকে মুক্তি চাই। আমরা বিশ্বাস করি আপনি আমাদের জন্য যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা একটি আতঙ্ক থেকে বা মৃত্যুর পথযাত্রী হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করবে।
তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটিই মানবিক আবেদন আমাদের এস.এস.সি ব্যাচ ২০২১ ব্যাচকে যেন অটো-প্রমোশন দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করে আমাদের এস.এস.সি ২১ ব্যাচ এর পক্ষ থেকে আমি, রায়ান উৎস, আমার বক্তব্য শেষ করছি।