ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৩ অক্টোবর ২০২২
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য সন্ধ্যা বাতি

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
অক্টোবর ১৩, ২০২২ ৫:৫৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আনিসুর রহমান,রাজারহাট উপজেলা প্রতিনিধিঃ আমাদের দেশের গ্রামীণ সমাজের প্রতিটি ঘরে ঘরে একসময় আলোর অন্যতম বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হতো সন্ধ্যা বাতি হারিকেন।এটি কালের বিবর্তনে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা সহ জেলার প্রায় সব অঞ্চলের সবার ঘর থেকে হারিয়ে গেছে। সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রতিটি ঘরের চিত্রটাই পাল্টে গেছে। গ্রামীণ সমাজের সন্ধ্যা বাতি হারিকেন এখন অতীত স্মৃতিতে পরিনত হয়ে গেছে।


সমাজ পরিবর্তন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী হারিকেন এখন বিলুপ্তির পথে। বৈদ্যুতিক বাতি, চার্জার ও সৌর বিদ্যুতের নানা ব্যবহারের ফলে হারিকেনের ব্যবহার আজ আর চোখে পড়ে না। জেলার গ্রামাঞ্চলে এখন হারিকেন যেমন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর তেমনি বিদ্যুৎ নেই এমন গ্রামও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানে হারিকেনের জায়গা দখল করে নিয়েছে সৌর বিদ্যুতের আলো বা চার্জার লাইট।


গ্রামাঞ্চলের দু-এক বাড়িতে হারিকেন পাওয়া গেলেও ব্যবহার না করায় সেগুলোতে ময়লা ও মরিচা পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এখন আর কোনো ঘরে কিংবা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হাজার বছরের ঐতিহ্যের বাহন সেই হারিকেন আর চোখে পড়ে না। অথচ এখন থেকে ২০ বছর আগেও যেখানে বেশিরভাগ ঘরেই ব্যবহার হতো হারিকেন, আর ২০বছর পরে এসে সেইরূপ এখন পুরোটাই পরিবর্তিত হয়েছে। ২০ বছর আগেও চিত্রটি ছিল এমন যে, সারাদিনের কর্মব্যস্ততা সেরে সাঁঝের বেলায় নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন সন্ধ্যায় ঘরের আলো জ্বালানো নিয়ে।
প্রতি সন্ধ্যায় হারিকেনের চিমনি খুলে, ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ছিপি খুলে কেরোসিন তেল ঢেলে আবার ছিপি লাগিয়ে রেশার মধ্যে দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে তা নির্দিষ্ট সীমারেখায় রেখে ঘরের মেঝে জ্বালিয়ে রাখত। ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা ও কিছুটা ছড়াকারের মত এক ধরনের কাপড়-ফিতা বা রেশা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। আলো কমানো ও বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট একটি গিয়ার ছিল। হাতের সাহায্যে তা ঘুরিয়ে আলোর গতিবেগ কমানো ও বাড়ানো যেতো। রাতে ঘুমানোর সময় আলো কমিয়ে সারারাত হারিকেন জ্বালিয়ে রাখা হতো। তখন কুপি ছিল কয়েক প্রকার। একনলা, দুইনলা, একতাক, দুই তাকের, পিতল ও সিলভারের।


তবে সিলভার, টিন এবং মাটির তৈরি বাতির ব্যবহার ছিল খুব বেশি। বাতির নলে আগুন জ্বালানোর জন্য ফিতা বা রেশা হিসেবে ব্যবহার করা হতো ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো কিংবা পাটের সুতলি। চিকন আর লম্বা করে ৫-৬ ইঞ্চির দৈর্ঘ্যর ওই ফিতা বা রেশা বাতির নল দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিতো। প্রতিদিন এর কিছু অংশ জ্বলে পুড়ে যেত। ফের পরের দিন আবার একটু উপরের দিকে তুলে দিতো।এক পর্যায়ে তা পুড়ে গেলে আবার নতুন করে লাগানো হতো। এটা ছিল নারীদের সন্ধ্যাবেলার দৈনন্দিন কাজের বিশেষ একটি অংশ।
এই বাতি দিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করতো। এছাড়াও রাতের সকল কাজ, যেমন রান্না-বান্না, কুটির শিল্প, হস্তশিল্প, ধান মাড়ানোসহ সকল চাহিদা মেটানো হতো এই আলো দিয়ে। এখন আর চোখে পড়ে না হারিকেন নামক সেই বাতির কথা।
রাজারহাট উপজেলা ঘুরে কথা হয়, প্রবীন ব্যাক্তি আক্কাস আলীর সাথে তিনি বলেন, হারিকেন এখন চোখেই দেখি না। অথচ এই হারিকেন শুধু সন্ধ্যা বাতি হিসাবে ব্যবহার হতো না। তিনি বলেন আমি যখন রিকশা চালাতাম রাতের বেলা এর ব্যবহার আলোর পথ পথপ্রদর্শক হিসেবে ব্যবহার করতাম।এখন আর এই বাতি নেই বললেই চলে।


উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সরকারি মীর ইসমাঈল হোসেন কলেজের উপাধ্যক্ষ সাজেদুর রহমান মন্ডল চাঁদ জানান, কালের বিবর্তনে হারিকেন ব্যবহার চোখে পড়ে না।তিনি বলেন এক সময় তাদের বাড়িতে সন্ধ্যা বাতি ছিল। যে ঘরে তারা বসে স্বাচ্ছন্দবোধ করত। সন্ধ্যা হলেই বোঝা যেত ঘরগুলো যেন এক শান্তির চাদর। তিনি আরো বলেন,বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম তো এখনো চোখে দেখেনি হারিকেন বাতির কথা। কালের আবর্তনে ডিজিটাল যুগে এই হারিকেন নামীয় বস্তুটি কোন এক সময়ে স্মৃতি যাদুঘরে দেখা যাচ্ছে অতিত স্মৃতি হয়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুন