স্টাফ রিপোর্টারঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় স্কুল পড়ুয়া দুই কিশোরকে ধর্ষণের অভিযোগে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাশিয়ারছড়া কালীরহাট বাজার এলাকা থেকে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সোমবার বিকেলে ভুক্তভোগী এক কিশোরের মা ও এক কিশোরের দাদা বাদী হয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে আসামি করে ফুলবাড়ী থানায় মামলা করেছেন। ভুক্তভোগী দুই কিশোরকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কুড়িগ্রামে হাসপাতালে হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম জয়ন্ত কুমার মোহন্ত। তিনি ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং একই ইউনিয়নের পূর্ব পানিমাছকুটি গ্রামের বাসিন্দা।
মামলায় ভুক্তভোগী দুই কিশোরের পরিবার অভিযোগ করে, গতকাল রোববার ছাত্রলীগ নেতা জয়ন্ত ফোনকলে ওই কিশোরদের তাঁর দোকানে ডাকেন। তাঁর কল পেয়ে দুই কিশোর তাদের আরও দুই বন্ধুসহ উপজেলা গেটে জয়ন্তের দোকানে যায়। জয়ন্ত তাদেরকে আপ্যায়ন করিয়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর তিন কিশোরকে বাড়ির পাশের একটি দোকানে চা-নাশতা করতে পাঠিয়ে দেন। এক কিশোরকে জয়ন্ত নিজ বাড়িতে নিয়ে গলায় ছুরি ধরে ভয় দেখান এবং ধর্ষণ করেন।
এর কিছুক্ষণ পরে ভুক্তভোগী কিশোরকে তার বন্ধুরা খুঁজতে আসলে জয়ন্ত আরও এক কিশোরকে আটক করেন। এতে অপর দুই কিশোর পালিয়ে যায়। এরপর জয়ন্ত দ্বিতীয় কিশোরের গলায় ছুরি ধরে তাকেও ধর্ষণ করেন। পরে কিশোররা বাড়িতে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অভিভাবকদের জিজ্ঞাসায় তারা ঘটনা খুলে বলে। সোমবার তাদের ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। কিছু ফাইন্ডিংস রয়েছে। আমরা ভুক্তভোগীদের কুড়িগ্রাম হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’
তবে এই অভিযোগকে প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা জয়ন্ত। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সোমবার বিকেলে তিনি বলেন, ‘আমি একা একই সময়ে দুই কিশোরকে ধর্ষণ করতে পারি? এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট। আমি ওই চার কিশোরের সঙ্গে তাদের সাইকেলে করে গতকাল (রোববার) দুপুরে বাড়িতে গিয়েছিলাম, এটা সত্যি। তাদেরকে বাড়ির বাইরে দাঁড় করে রেখে আমি গোসল করে আবার তাদের সাইকেলে করে দোকানে ফিরেছি। ওই সময় আমার মা এবং বোন বাড়িতে ছিলেন।’
অভিযুক্ত জয়ন্ত বলেন, ‘ওই চারজনের সঙ্গে দোকানে ফেরার পর তারা আমার দোকানে চা–নাশতা খেয়েছে। রাতেও তারা আমার দোকানে এসেছিল। আজ সকালে শুনি আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ। এটা আমার প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র। কয়েক দিন আগে ছাত্রলীগের ওপর যারা হামলা হয়েছে, তারাই এই নোংরা খেলায় নেমেছে। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি কী করব বুঝতে পারছি না।’
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তৌকির হাসান তমাল বলেন, ‘আমাদের কাছে এটা ষড়যন্ত্র বলেই মনে হচ্ছে। তারপরও আমরা জয়ন্তের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারও ব্যক্তিগত অভিযোগের দায় সংগঠন নেবে না।’
ওসি ফজলুর রহমান বলেন, ‘ভুক্তভোগী দুই কিশোরের পরিবারের পক্ষ থেকে সোমবার বিকেলে মামলা হয়েছে। পরে আসামি জয়ন্তকে গ্রেপ্তার করে থানায় নেওয়া হয়েছে।’