মেহেরপুর প্রতিনিধি
মেহেরপুরের গাংনীর কামারখালী গ্রামের এমরান ১২টি গরু নিয়ে গিয়েছিলেন ঢাকার গাবতলী পশুর হাটে। পাঁচটি নেপালি জাতের গরু নিজ বাড়িতে পালন করেছিলেন, দুটি গরু গ্রামের এক গেরস্তের কাছ থেকে নিয়েছিলেন বাকিতে। পাঁচটি কিনেছিলেন বামন্দি পশুর হাট থেকে। আশা করেছিলেন বেশি দামে গরুগুলো বিক্রি করে মহাজনের দেনা পরিশোধ করবেন। পরে ছোট বাছুর গরু কিনে লালন-পালন করবেন। বাকি টাকা দিয়ে একটি বাড়ি করবেন।
সে স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল এমরানের। গাবতলী পশুর হাট থেকে একটি দুই লাখ টাকা দামের গরু হারিয়ে যায়। প্রচণ্ড গরমে মারা যায় আড়াই লাখ টাকা দামের আরেকটি গরু। পরে পাঁচটি গরু বাজারদরের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হন। অন্য গরুগুলো ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।
গরুর মৃত্যু আর লোকসানের শোক সইতে না পেরে স্ত্রী নেকজান মারা যান ঈদের দিন। একদিকে স্ত্রীর মৃত্যু শোকে পাথর অন্যদিকে লোকসানের বোঝায় এমরান কাতর হয়ে পড়েছেন।
চাঁদপুর গ্রামের ব্যাপারী রেজাউল হক জানান, এমরান একজন ভালো ব্যবসায়ী। এবার অন্তত পাঁচ-ছয় লাখ টাকা লাভ করতেন। রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম থাকায় গরমে একটি গরু মারা যায়। গাড়ি থেকে গরু নামানোর সময় একটি গরু খুঁজে পাওয়া যায়নি। অব্যাহত লোকসান সইতে না পেরে তার স্ত্রী মারা গেছে। এখন তিনি কীভাবে মাথা তুলে দাঁড়াবেন সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, এমরানের মতো এবার অধিকাংশ ব্যাপারীর কপাল পুড়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কামারখালী গ্রামের ৮০ ভাগ লোক গরু ব্যবসায়ী। তারা গরু ব্যবসার পাশাপাশি গরু পালন করেন। এখন ব্যবসায়ী ও গেরস্তরা যেসব গরু ঢাকা থেকে ফেরত আনছেন যত্নের অভাবে সেসব পশুর শরীর ভেঙে গেছে। সেরে উঠতে অন্তত তিন মাস সময়ে লেগে যাবে। এতে খরচ বেড়ে যাবে। এ খরচ ওঠানো সম্ভব হবে না। ফলে লোকসান দিয়েই কসাইদের কাছে গরু বিক্রি করতে হবে।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা জামান জানান, উপজেলায় প্রায় বাড়িতেই পশু পালন হয়। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। করোনার কারণে গেরস্ত ও ব্যবসায়ীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগ কৃষক ও ব্যবসায়ীদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।