নিউজ ডেস্কঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্যের খণ্ড-বিখণ্ড অংশ জোড়াতালি দিয়ে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে স্থাপন করা হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সেন্সরশিপ ও নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে বইমেলার প্রবেশমুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে চারুকলার একদল শিক্ষার্থী একটি প্রতিবাদী ভাস্কর্য স্থাপন করেছিল। কিন্তু দু’দিন না যেতেই ১৬ ফেব্রুয়ারি সেটি সরিয়ে ফেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভাস্কর্যের মাথাটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাওয়া যায়। পরে এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে ভাস্কর্য নির্মাণের সাথে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা শিমুল কুম্ভকার জানান, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেখি কিছু বাচ্চা ছেলে ভাস্কর্যের মাথাটি নিয়ে খেলা করছে। পরে সেটি সংগ্রহ করে আজ আবার আমরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ভাস্কর্যটি স্থাপন করেছি।
তিনি আরও জানান, ভাস্কর্যের পাশে দু’টি ব্যানার টানিয়েছি। ব্যানারের একটিতে লেখা আছে, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং সব ধরনের সেন্সরশিপ বন্ধ কর’, আরেকটিতে লেখা আছে ‘তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি’।
এর আগে, ভাস্কর্যটি সরানোর কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ছাড়া আমাদের ছাত্র আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে যে ভাস্কর্যটি আছে সেটির পাদদেশে কে বা কারা গোপনে কাজটি করে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কর্তৃপক্ষ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার একটি নীতিমালা আছে। ভাস্কর্য স্থাপনের ব্যাপারেও আমাদের কিছু প্রক্রিয়া আছে।
তিনি জানান, এর আগেও একটি জায়গায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন করতে চেয়েছিল কিছু শিক্ষার্থী। কিন্তু, আমরা সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করেই ওই ভাস্কর্যটি ওখানে স্থাপন না করতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়েছি। ওরা দু’বার এসেছিল। ওদেরকে দুইবারই ফিরিয়ে দিয়েছি। ভাস্কর্যের মতো বিশেষ কিছু স্থাপনের আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নিতে হয়।
প্রক্টর আরও বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, ওরা ভাস্কর্য স্থাপন করলে সেখানকার দু’টি ভাস্কর্যের সৌন্দর্যই বিনষ্ট হতো। ভাস্কর্যের যে সংস্কৃতি ও সম্মান সেটির অপমান করা হয়েছে। আমাদের কবিগুরু, বিশ্বকবি এবং বাংলা সাহিত্যের পুরোধাকে এভাবে স্থাপন করাটা নিঃসন্দেহে অপসংস্কৃতি। কেউ এই অপসংস্কৃতি সৃষ্টি করেছে গোপনে। রবি ঠাকুরের যে সম্মানবোধ অর্থাৎ তাকে কীভাবে স্থাপন করতে হবে সেটিওর একটি নান্দনিকতা আছে। এটিকেই আমি অপসংস্কৃতি বলছি। এটি আমাদের শিক্ষার্থীরা করে থাকলে তাদেরকে পরামর্শ দেবো যেনো তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আর না করে।
অনেকেই না বুঝে প্রতিবাদ করছে উল্লেখ করে প্রক্টর বলেন, বিশ্বকবি নাকি গুম হয়ে গেছেন, এ ধরনের বক্তব্য আসলে হীন চিন্তার প্রতিফলন। হীন উদ্দেশ্যেই এগুলো করা হচ্ছে। কোনো ভালো ও ইতিবাচক চিন্তা ও উদ্দেশ্য থাকলে আমাদের কাছে আসবে, বলবে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনে করে যে এটা সর্বদিক থেকে ভাল তাহলে কর্তৃপক্ষ সেটি ভাববে। এভাবেই তো এখানে এতো এতো ভাস্কর্য হয়েছে।