তথ্য ও প্রযুক্তি ডেস্ক | পরবর্তী প্রজন্মের চিপ ডিজাইন করতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে গুগল। এর প্রকৌশলীদের মতে, মোটামুটি দক্ষ প্রোগ্রামাররা যেভাবে অ্যালগরিদম ডিজাইন করে থাকেন মেশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করে; ঠিক একই ধরনের কিংবা অনেক ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত উন্নততর অ্যালগরিদম ব্যবহার করা যায়। তবে এ পদ্ধতিতে তুলনামূলক কম সময়ে বেশ কিছু অ্যালগরিদম তৈরি করা যায়। গুগলের ভাষ্য অনুযায়ী, মানুষের জন্য এক মাস সময় লাগে এমন কাজ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করা যায়।
মেশিন লার্নিং পদ্ধতির সাহায্যে কীভাবে চিপ তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে গবেষণা চালাচ্ছে গুগল। সাম্প্রতিক সময়ে ‘নেচার’ শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, প্রথমবারের মতো গুগল তাদের গবেষণা বাণিজ্যিকভাবে প্রয়োগের চেষ্টা চালিয়েছে। গুগল তাদের উদ্ভাবিত টেনসর প্রসেসিং ইউনিটের চিপ উৎপাদনে মেশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করে। মূলত কম্পিউটার সংশ্নিষ্ট ডিভাইসের কাজে ব্যবহারোপযোগী হিসেবে এ চিপ তৈরি করা হয়। গবেষকদের মতে, গুগলের এ ধরনের উদ্যোগ আগামী দিনগুলোতে চিপ ইন্ডাস্ট্রিতে বিপ্লবের সূচনা করবে। বিশেষত, যে কোনো ডিজাইন তৈরিতে আর্কিটেকচার স্পেসগুলো আরও দ্রুত সন্ধান করতে ও নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনে সহজে চিপগুলোকে কাস্টমাইজ করতে মেশিন লার্নিং পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তারা আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। নেচারে প্রকাশিত একটি এডিটোরিয়ালে গুগলের এ প্রজেক্টকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সত্তরের দশকে প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী মুর একটি স্বীকারোক্তি করেছিলেন। মুরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী প্রতি দুই বছরে চিপে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার চিপে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা বৃদ্ধি না করে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নতুন ক্ষেত্র প্রসারিত করবে।
কোনো নির্দিষ্ট কাজের জন্য গুগল কর্তৃক ব্যবহূত অ্যালগরিদমকে ‘ফ্লোর প্ল্যানিং’ বলা হয়। এমন মানব ডিজাইনার প্রয়োজন হয়, যারা একটি চিপের সাবসিস্টেমের জন্য সিলিকন ডাই ডাইমেটিক লেআউট সন্ধানের জন্য কম্পিউটার সরঞ্জামের সহায়তায় কাজ করে। এই উপাদানগুলোতে সিপিইউ, জিপিইউ এবং মেমোরি কোরগুলো রয়েছে। প্রতিটি উপাদানকে একটি ডাইতে কোথায় রাখবেন, তা সিদ্ধান্ত নেওয়া চিপের চূড়ান্ত গতি এবং দক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলে। চিপ উৎপাদন এবং গণনার চক্র উভয়ই স্কেল দেওয়া, স্থান নির্ধারণের ন্যানোমিটার পরিবর্তনগুলো বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। গুগলের ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, ফ্লোর প্ল্যানিংয়ের সাহায্যে কোনো ডিজাইন সম্পন্ন করতে বেশ সময় প্রয়োজন। তবে মেশিন লার্নিং দৃষ্টিকোণ থেকে এ সমস্যা সমাধানে একটি পরিচিত উপায় রয়েছে, যাকে ইঞ্জিনিয়াররা গেম হিসেবে তুলনা করেছেন। দাবা কিংবা গো-এর মতো বোর্ড গেমে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইতোমধ্যে মানুষকে টেক্কা দিতে সক্ষম হয়েছে। গুগলের ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, তাই ফ্লোর প্ল্যানিংকে কোনো চ্যালেঞ্জের সমকক্ষ হিসেবে তুলনা করেছেন। নাইটস এবং রুকসের মতো দাবার ঘুঁটির পরিবর্তে সেখানে রয়েছে সিপিইউ এবং জিপিইউ। প্রতিটি বোর্ডে জয়ের শর্ত অনুসন্ধান বলতে আমরা যা বুঝি, এখানেও সে ধরনের বিষয় রয়েছে। দাবাতে চেকমেট বলতে আমরা যা বুঝি, চিপ ডিজাইনে সেটি হতে পারে গণনার দক্ষতা। গুগলের ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন ধরনের ১০ হাজার চিপ ফ্লোর প্ল্যানিংয়ের একটি ডেটা সেটে তাদের অ্যালগরিদমের ওপর গবেষণা করেছেন, যার মধ্যে কয়েকটি এলোমেলোভাবে তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিটি নকশাকে তারের দৈর্ঘ্য এবং বিদ্যুতের ব্যবহারের মতো বিভিন্ন প্রভাবকের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট রিওয়ার্ড ফাংশন দ্বারা ট্যাগ করা হয়েছিল। তবে সব ক্ষেত্রে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম মানুষের মতো চিন্তা করে না এবং প্রায়ই পরিচিত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত ফলাফল প্রদর্শন করে। জার্নাল নেচারে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি উল্লেখযোগ্য। কেননা, শুধু চিপ নয়, ভবিষ্যতে গুগল অন্য অনেক ক্ষেত্রে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে।