খাজা রাশেদ, লালমনিরহাট: ভারতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
পানি নিয়ন্ত্রণে খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট।
১৮ জুন (সোমবার) সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়, যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল এবং সকাল ৯টায় ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।
এদিকে হঠাৎ করে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে,নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল সহ চরান্চলের অনেক বাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানা গেছে।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে,শাকসবজি সহ ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে ফসলহানির
শঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন, কৃষকরা। সেই সাথে, গবাদী পশুপাখির খাবার নিয়ে ও বিপাকে পড়েছেন তারা।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের
নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদ্দৌলা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি বেড়ে গেছে । ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে, পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে, বন্যার শঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমরা তিস্তা নদীবেষ্টিত এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছি। কিছু জায়গায় কাজ এখনো চলমান রয়েছে। এছাড়া ভাঙ্গণ প্রবণ এলাকা গুলোত জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন,বন্যা মোকাবিলার জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়া ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে গবাদি পশুপাখির খাবার নিয়ে ও তারা বিপাকে পড়েছেন। এদিকে জেলার ৫টি উপজেলার নদীবেষ্টিত সদর উপজেলার গোকুন্ডা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালীগঞ্জ উপজেলার শৈলমারী, বৈরাতি ও রুদ্রেশ্বর এলাকা হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডীমারী, সিন্দুর্না,সানিয়াজান ইউনিয়ন সহ নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি প্রবেশ করায় বিপাকে পড়েছে এ সাধারণ মানুষ। জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার বেশ কিছু স্থানে খোঁজ -খবর নিয়ে জানা গেছে,
বৃহস্পতিবার থেকে হঠাৎ করেই ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে নদীর পানি বৃদ্ধি পায়।
শনিবারে পানি কিছুটা কমলেও, গতকাল রাত থেকে আবারো, পানি হু-হু করে বাড়ছে।
এতে করে,বন্যা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে,তিস্তার তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা। উপজেলার কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ করেই, তিস্তার পানি বেড়ে এখানকার অনেক জায়গায় প্রবেশ করেছে।
ছোট-ছোট বাচ্চা, গরু- ছাগল ও হাঁস-মুরগি সহ ক্ষেতের ফসল নিয়ে বিপদে পড়েছি। সেই সাথে, সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির।
তারা আরো বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশ কিছু যায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেকেই, বাড়িঘর ভেঙ্গে অনত্র সরিয়ে ফেলছে।
গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান,আমার ইউনিয়নে অনেক স্থানে পানি বৃদ্ধির ফলে,পানি বন্দী হয়ে পড়েছে অনেকেই।বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে,দুর্গত মানুষদের পাশে দাড়াচ্ছি।
এ বিষয়ে,লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজির হোসেন বলেন,এ ব্যাপারে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সহ জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছি। কিছু এলাকায় পানি উঠেছিল।
পড়ে, খবর নিয়ে দেখেছি অনেক এলাকার পানি নেমে গেছে। বন্যা দেখা দিলে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।