ধানের ডগায় শিশিরের পরশ দিয়ে প্রকৃতি থেকে যায় যায় করছে ঋতুরানি হেমন্ত। তাপমাত্রার পারদ ক্রমেই নামছে নিচে।
দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীতবুড়ি। দিনে রোদের উত্তাপ আর গায়ে লাগছে না।
সন্ধ্যায় একটু হালকা গরম কাপড় পরেই বের হতে হচ্ছে বাইরে।
আর রাতে কাঁথা-কম্বল শরীরে না জড়িয়ে ঘুমানো যাচ্ছে না।
ভোরে ও সন্ধ্যায় গাছ-গাছালি শোভিত পড়ছে কুয়াশার আস্তরণ।
উত্তরের হাওয়ায় মিলছে হিমেল স্পর্শ।
পথের পাশে থাকা সবুজ জংলি গাছপালা, ঝোপঝাড় ও মাঠের দুর্বাঘাসগুলো শিশিরে ভিজে উঠছে। সকালের সোনাঝরা রোদে চিকচিক করে উঠছে সেই শিশিরবিন্দুগুলো। শহুরে জীবনে তো বটেই গ্রামীণ জনপদেও এখন বিরাজ করছে স্নিগ্ধ শীতের আমেজ। শীতল আবহাওয়া পুরোদমে উপভোগ করেত শুরু করেছে ফেনীর শহর ও গ্রামের মানুষ। তাই সবখানেই চলছে শীতের প্রস্তুতি।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ফেনী জেলার দিনের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকছে। আর দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এসে দাঁড়িয়েছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। সাধারণত ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা নেমে আসলে শীত অনুভূত হয়- এমনটাই বলছে আবহাওয়া অফিস। তবে ঋতু পরিক্রমায় পুরোদমে শীত নামতে এখনও প্রায় এক মাস বাকি। কিন্তু ফেনীতে এখনই শীতের আমেজ মেলায় পরিবারের লোকজনের জন্য বাক্সবন্দি করে রাখা লেপ-কাঁথা ও কম্বলসহ শীতবস্ত্র বের করছেন গৃহিণীরা।
অনেকে পুরনো লেপ ঠিক করার জন্য বের করছেন। আবার অনেকে নতুন করে লেপ তৈরি করতে দিচ্ছেন। আর মানুষের শরীরের কাপড়ে পরিবর্তন আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ফেনী শহরের কারিগররা। শহরের বিভিন্ন এলাকার অলিগলি ঘুরে ঘুরেও ধুনকররা তৈরি করেছেন লেপ-তোষক।
বিশেষ করে ক’দিন থেকে পাখিডাকা ভোরেই তুলা, কাপড় ও ধুনার নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন ধুনকররা। কেউ বাইসাইকেলে, কেউ বা ব্যাটারিচালিত ভ্যানে আবার কেউ হেঁটে ঘুরছেন পাড়ায় পাড়ায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটি বাড়িতে লেপ বা তোষক তৈরি করছেন। আবার অর্ডার নিচ্ছেন পরের দিনের জন্য। ধুনকরের টুং-টাং আওয়াজ আর বাতাসে উড়ে বেড়ানো তুলা জানিয়ে দিচ্ছে শীত আসছে।
এছাড়া ফেনী শহরের লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতেও অতিরিক্ত কারিগর কাজ শুরু করে দিয়েছেন এরই মধ্যে। পাড়া-মহল্লার পাশাপাশি দোকানেও কাজ চলছে পুরোদমে। এখন তাদের ব্যস্ততার শেষ নেই। ফেনী শহরের পুরনো ধুনকর হাসেম মিয়া,তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশ কে জানান, গেলো এক সপ্তাহ আগেও তেমন কাজ-কর্ম ছিল না। কিন্তু কয়েকদিন থেকে ফেনীতে প্রচুর শীত পড়েছে। ভোরে কুয়াশা থাকছে, সন্ধ্যার পর বইছে ঠাণ্ডা বাতাস। এতেই লেপ তৈরির অর্ডার দেওয়া-নেওয়া শুরু হয়ে গেছে।
হাসেম মিয়া জানান, দোকানের আসার পর আজই দুপুর পর্যন্ত ১৫টি লেপ তৈরির অর্ডার পেয়েছেন। কাউকে তিনদিন কাউকে চারদিন কাউকে এক সপ্তাহ কাউকে ১০ দিন পর লেপ ডেলিভারি করবেন।
অপর ধুনকর কাউসার প্রতিদিনের বাংলাদেশ কে জানান, শীত মৌসুম এখনও ঠিক করে শুরু হয়নি। এরপরও আগাম প্রস্তুতি হিসেবে মানুষজন লেপ-তোষক তৈরির অর্ডার দিচ্ছেন। এতে তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। তবে পুরোদমে শীত পড়লে লেপ-তোষক তৈরি আরও বাড়বে। বাড়ির লেপ-তোষক ও বালিশ তৈরির জন্য সাধারণত শীতকালকেই সবাই বেছে নেন।
বর্তমানে পুরনো লেপ নতুনভাবে তৈরির অর্ডারই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। গার্মেন্টসের তুলা দিয়ে তৈরি করা লেপও বিক্রি হচ্ছে। যার বিক্রিমূল্য সিঙ্গেল ৭শ টাকা। আর ডাবল লেপ ১ হাজার ২৫০ টাকা। এছাড়া ভালো শিমুল তুলা দিয়ে নতুনভাবে একটি সিঙ্গেল লেপ তৈরি করতে এখন খরচ পড়ছে ১ হাজার ৫শ টাকা, আর ডাবল লেপ তৈরিতে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৮শথেকে ২ হাজার ২শ টাকা। এছাড়া সিঙ্গেল তোষক ৭শ টাকা এবং ডাবল ১ হাজার ৫শ টাকা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। ফেনী শহরের মিজান রোড, এলাকার মানু মিয়া প্রতিদিনের বাংলাদেশ কে বলেন, একটি লেপ তৈরিতে একজন কারিগরের সময় লাগছে এক থেকে দুই ঘণ্টা। এভাবে একজন কারিগর দিনে গড়ে ৫ থেকে ৬টি লেপ তৈরি করতে পারছেন।
দিনে ৫ থেকে ৬টি তোষক তৈরি করতেও প্রায় একই সময় লাগছে। তুলা ও কাপড়ের দাম বাড়ায় গত বছরের তুলনায় এবার লেপ-তোষকে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি লাগছে। এছাড়া কারিগরদের মজুরিও বেড়েছে। সবমিলিয়ে লেপ-তোষক তৈরিতে কয়েকদিন থেকে ব্যস্ততা বেড়েছে বলেও জানান এই কারিগর।