ঢাকামঙ্গলবার , ১৭ জানুয়ারি ২০২৩
  1. অপরাধ ও আদালত
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইসলাম ডেস্ক
  5. কৃষি ও অর্থনীতি
  6. খেলাধুলা
  7. জাতীয়
  8. তথ্য-প্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. নির্বাচন
  11. বানিজ্য
  12. বিনোদন
  13. ভিডিও গ্যালারী
  14. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
  15. রাজনীতি
আজকের সর্বশেষ সবখবর

লালমনিরহাটে নর্থবেঙ্গল বাক-শ্রবণ-প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে চলছে তুঘলক কান্ড!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ ৬:২৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট।। লালমনিরহাট নর্থবেঙ্গল বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নিয়ে চলছে তঘলকী কারবার। জালিয়াতি, লুটপাট ও দুর্নীতির মহোৎসবে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। দেখেও দেখছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাই দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল।

বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে লালমনিরহাট পৌরসভার গোশালা সোসাইটি চত্তরে প্রতিষ্ঠিত হয় নর্থবেঙ্গল বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। ২০২০ সালের ৬ আগস্ট বিদ্যালয়টির এমপিও ঘোষণা হয় এবং ২০২১ সালের ২৭ মে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রধান শিক্ষক ছাড়াই মোট ১২ জন শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও আদেশ জারি হয়। বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কোন প্রধান শিক্ষক না থাকলেও বেআইনী প্রভাব খাটিয়ে প্রধান শিক্ষক পরিচয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ছুটি, বেতন-ভাতা, উচ্চ শিক্ষার অনুমোদন, আয়-ব্যয় সহ যাবতীয় বিষয়াদি নিজ স্বাক্ষরে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন সুভাষ চন্দ্র বর্মন নামে এক এনজিও পরিচালক। তিনি এমপিওভূক্ত উক্ত বিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষকই নন, অথচ প্রধান শিক্ষক পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে ২০২১ সালের ১৪ জুন তার প্রতিবেশী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার রায়ের নামে সভাপতির মনোনয়ন গ্রহণ করেন এবং নিজে সদস্য সচিব হয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে মেতে উঠেন জালিয়াতি ও লুটপাটের মহোৎসবে।

২০২২ সালের ২৪ আগস্ট জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে এক পত্রের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানানো হয় যে, ‘‘সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ২৭/৫/২০২১ তারিখের পত্র অনুযায়ী জনাব সুভাষ চন্দ্র বর্মন এর নাম উল্লেখ নেই এবং তাকে অবৈতনিক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়নি”। তথাপি সদস্য সচিব হিসেবে তার নাম এ ব্যবস্থা কমিটিতে কিভাবে বহাল থাকতে পারে তা সচেতন মহলের বোধগম্য নয়।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাইমারী লেভেলের প্রতিবন্ধী বিষয়ক এ বিদ্যালয়ে মোট ৯৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর চাহিদা দেখিয়ে চাকুরী দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে বিভিন্ন সময়ে তাদের নিকট থেকে অর্থ লোপাট করে আসছেন সুভাষ চন্দ্র বর্মন। প্রতিবেশী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার রায়কে সভাপতি করার পর তার মোটা অংকের অর্থ লোপাটের দ্বার আরো উন্মুক্ত হয়ে যায়। জালিয়াতি ও লুটপাটে যোগ হয় নতুন মাত্রা। ২০২২ সালে কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে ২০১২ এবং ২০১৮ সালের নিয়োগ দেখানো হয় ৩৪ জন শিক্ষক-কর্মচারীর। এ দুই সালের নিয়োগে দেখানো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, ফলাফল শীট, নিয়োগ কমিটির রেজুলেশন ও নিয়োগ অনুমোদন রেজুলেশন সবই জাল।

লালমনিরহাট চার্চ অব গড উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদকে নিয়োগ কমিটির সভাপতি হিসেবে দেখিয়ে তার স্বাক্ষর স্ক্যান পূর্বক জালিয়াতিমূলক ফলাফল শীট ও নিয়োগ কমিটির রেজুলেশন তৈরি করা হয়।

একইভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে স্বাক্ষর স্ক্যান পূর্বক নিয়োগ অনুমোদনকারী ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দেখানো হয় লালমনিরহাট জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক সিরাজুল হককে। অথচ তারা এ নিয়োগের ব্যাপারে কিছুই জানেন না।

ইতিমধ্যে মোঃ আবুল কালাম আজাদ এ নিয়োগের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়টি জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন বলে জানা যায়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এসব শিক্ষকদের কারোই কাঙ্খীত শিক্ষাগত যোগ্যতা (বিএসএড ডিগ্রী) নেই। এ বিদ্যালয়ে প্রকৃত বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জনও নেই অথচ এখন পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৫৬ জন।

জালিয়াতির মাধ্যমে ২০১২ ও ২০১৮ সালের নিয়োগ দেখানো এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভূক্তির জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জোড় তদবীর চলছে বলে জানা যায়। এছাড়াও সুভাষ চন্দ্র বর্মনের বিরুদ্ধে রয়েছে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন নর্থবেঙ্গল একীভূত শিক্ষা কেন্দ্রের এসএমসি কমিটির সভাপতি হওয়া, নর্থবেঙ্গল বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নর্থবেঙ্গল একীভূত শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষার্থী হিসেবে দেখানো, নর্থবেঙ্গল বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের দিয়ে নর্থবেঙ্গল একীভূত শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনা করা সহ বিভিন্ন অভিযোগ।

সুভাষ চন্দ্র বর্মনের জালিয়াতি, লুটপাট ও দুর্নীতি বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও অজানা কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছেন নীরব ভূমিকায়। ওপেনসেক্রেট এ দুর্নীতি রুখতে দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল।

অভিযুক্ত সুভাষ বলেন, আমি প্রতিষ্ঠানটি খুব কষ্ট করে প্রতিষ্ঠিত করেছি। তাই সব কিছু দেখা শোনা করি। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জান্নাত আরা ফেরদৌস বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।