প্রতিদিনের বাংলাদেশ।। ঈদ যেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির উপলক্ষ না হয় সে জন্য জনগণের সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে আনন্দঘন পরিবেশে আরও ঈদ করা যাবে।
ঈদুল ফিতরের আগের সন্ধ্যায় জাতির জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রায় ১৬ মিনিটের এ ভাষণের একটি বড় অংশ জুড়েই করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সরকার প্রধান।
বলেন, ‘এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে এবারও আমাদের ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে। আমরা ঈদ উদযাপন করব, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
‘কোনোভাবেই এই ঈদ উদযাপন যাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির উপলক্ষ হয়ে না উঠে, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’
বৈশ্বিক মহামারি করোনা গোটা বিশ্বের জন্যই সংকট তৈরি করেছে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ব এক গভীর সংকটের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। কোভিড-১৯ নামক এক মরণঘাতী ব্যাধি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন এই ভাইরাস একদিকে যেমন অগণিত মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিসাধন করছে মানুষের জীবন-জীবিকার। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতির ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই ভাইরাস।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছরের শেষ দিকে যখন বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ অনেকটা কমতে শুরু করেছিল, তখন অন্যদের মতো আমরাও আশান্বিত হয়েছিলাম যে বিশ্ববাসী বুঝি এই মরণঘাতী ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। কিন্তু মার্চের মাঝামাঝি থেকে দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের সব পরিকল্পনা ও প্রত্যাশাকে নস্যাৎ করে দেয়।
করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার আরোপিত বিধিনিষেধের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। কাজেই জনসমাগম এড়াতে না পারলে এ রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। এ কারণে কষ্ট হবে জেনেও আমরা বাধ্য হয়েছি মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে। দোকান-পাট, শপিং মলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখতে হচ্ছে। একই কারণে গণপরিবহন চলাচলের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এমনই এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে এবারও আমাদের ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে। আমরা ঈদ উদযাপন করব, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কোনোভাবেই এই ঈদ উদযাপন যেন করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার উপলক্ষ হয়ে না ওঠে, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। জনগণের প্রতি অনুরোধ— আপনারা আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে যাবেন না। অনেকের কোনো বাহ্যিক লক্ষণ না থাকায় আপনি বুঝতে পারবেন না আপনার পাশের ব্যক্তিটিই করোনাভাইরাস বহন করছে। এর ফলে আপনি যেমন করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়বেন, তেমনি আপনার নিকটাত্মীয় বা পাড়া-প্রতিবেশীকেও ঝুঁকির মুখে ফেলবেন।
‘মনে রাখবেন, সবার ওপরে মানুষের জীবন। বেঁচে থাকলে আসছে বছর আবার আমরা আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারব,’— বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গত বছরের মতো এ বছরও ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত আয়োজনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় মসজিদে মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই যে যেখানে আছি সেখান থেকেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করি। বিত্তবান যারা আছেন বা যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের প্রতি অনুরোধ— এই দুঃসময়ে আপনার দরিদ্র প্রতিবেশী, গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়ান। তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। আপনার সাহায্য হয়তো একটি পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাবে। দেখবেন, তাদের হাসিমুখ আপনার হৃদয়-মনকেও পরিপূর্ণ করে তুলবে ঈদের আনন্দে। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় কর্তব্য। আমরা যেন এই কর্তব্যকর্ম ভুলে না যাই।’