ডেস্ক নিউজঃ আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাবার কাছে নতুন জামা চেয়েছিলেন বিষ্ণু। বাবা বিষ্ণুকে সান্তনা দেন আর বলেন মহালয়া শেষ হলেই নতুন জামা কিনে দিব। সেই মহালয়া দিন আসলো কিন্তু বিষ্ণু আর থাকলো না এ মায়ার জগতে। পঞ্চগড়েরর বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে মারা যায় বিষ্ণুর (৩)। বিষ্ণুর বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের হাতিডুবা ছত্রশিকারপুর গ্রামে। তার বাবার নাম রবিন চন্দ্র। গতকাল রোববার পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় মায়ের সঙ্গে মারা যায় বিষ্ণু।
নদী থেকে বিষ্ণু আর তার মায়ের মরদেহ উদ্ধারের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে লাশ ফেরত পাওয়ার পর পাশে বসে বিলাপ করছিলেন রবিন চন্দ্র। শুধু স্ত্রী–সন্তান নয়, রবিন হারিয়েছেন আরও দুই স্বজনকে। নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন রবিনের ছোট ভাই কার্তিক রায়ের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী (২৫) ও বড় ভাই বাবুল রায়ের ছেলে দীপঙ্কর (৩)।
বিলাপ করতে করতেই ভাটাশ্রমিক রবিন বলছিলেন, বাচ্চাগুলোর নতুন কাপড়চোপড় কেনার জন্য টাকা জোগাড় করেছিলাম। সেই টাকা এখন স্ত্রী–সন্তানের সৎকারে খরচ হবে ভাবিনি। আমার সব শেষ হয়ে গেল।
জানা যায়, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সেজেগুজে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন রবিনের স্ত্রী–সন্তান। বেলা একটার দিকে আউলিয়ার ঘাটে পৌঁছান তাঁরা। পথে কিছুটা দেরি হয়। উদ্দেশ্য বদেশ্বরী মন্দিরের মহালয়ার অনুষ্ঠানে আগেভাগেই যোগ দেওয়া। তড়িঘড়ি করে ভিড়ের মধ্যেই নৌকায় ওঠেন তাঁরা। কিছু দূর যেতেই দুলতে থাকে নৌকাটি। শুরু হয় চিৎকার–চেঁচামেচি আর আর্তনাদ। দেখতে দেখতে ডুবে যায় নৌকাটি। এতে নৌকায় থাকা ৭০ থেকে ৮০ জন যাত্রীর সবাই পানিতে ডুবে যান। কেউ কেউ সাঁতরে পাড়ে উঠে এলেও মৃত্যু হয় ২৪ জনের। এর মধ্যে রবিনের পরিবারের রয়েছেন চারজন।
দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম বলেন, নৌকাডুবিতে আমার ইউনিয়নেরই সাতজন মারা গেছেন। এর মধ্যে রবিনের স্বজনই চারজন। এ ঘটনায় ওই পরিবারটিতে শোকের মাতম চলছে।