নুর আলম,নেত্রকোণাঃ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে হাওরপাড়ের কৃষকদের ফসল হারানোর শঙ্কাও।
বিশেষ করে জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদীর পানি আগের তুলনায় আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের হাওরগুলোতে থাকা কাঁচা ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে টানা কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় প্রদেশের চেরাপুঞ্জিতে ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সুরমা নদী দিয়ে নেমে খালিয়াজুরী পয়েন্টে ধনু নদীর পানি বেড়েছে ১০ সেন্টিমিটার। সোমবার (০৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে পরিমাপ করে দেখা গেছে, ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র ৫৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শেষ ভরসা হচ্ছে ফসল রক্ষা বাঁধ। নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে ১৮৩ কিলোমিটার বাঁধের কোনো অংশ এখনও ভাঙেনি। আমরা বাঁশ এবং জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধগুলো আরও মজবুত করার চেষ্টা করছি।
এ নিয়ে কথা হলে খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, আমাদের হিসেবে এ উপজেলায় ২১ হাজার ১২০ হেক্টর জমির মধ্যে এখন পর্যন্ত প্লাবিত জমির পরিমাণ ১১৩ হেক্টর। এর মধ্যে ২০-২৫ হেক্টর জমির ধান কৃষকরা কর্তন করতে পেরেছেন। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোনো জমি প্লাবিত হয়নি বলে তিনি জানান।
এদিকে খালিয়াজুরী উপজেলার নিম্নাঞ্চল কীর্তনখোলা, লক্ষ্মীপুর, চুনাই, বাইদ্যারচর, কাটকাইলের কান্দা, টাকটার, মনিজান, লেবরিয়া, হেমনগর, গঙ্গাবদর, নয়াখাল, বাগানী, বৈলং ও ডাকাতখালী হাওরের জমিগুলো তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেকে পানিতে ডুবে যাওয়া কাঁচা ধান কেটে কিছু পরিমাণ হলেও ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। এছাড়া হাওর এলাকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে হাওরাঞ্চলের বোরো চাষিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাই তারা ফসল হারানোর ভয়ে কাঁচা ধান কাটছেন।
কথা হলে খালিয়াজুরী সদরের লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, এই জমিগুলোর ধান পাকতে আরও ১০-১৫ দিন দরকার ছিল। তবুও নিরূপায় হয়ে কেটে ফেলতে হচ্ছে। ধান না হোক অন্তত গরুর খাবারটা সংগ্রহ করা যাবে।
তিনি আরও জানান, যেভাবে পানি বাড়ছে যদি আরও তিন-চার দিন এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে সব ফসল তলিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, হাওরের কিছু এলাকায় আগাম জাতের ধান (ব্রি-২৮) কিছুটা কাটা শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে কাটা-মাড়াই শুরু হবে আরও ১০-১৫ দিন পর। এরই মধ্যে পাহাড়ি ঢল আসতে শুরু করায় আমরা অনেকটা আতঙ্কিত।
তবে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এলাকার কৃষকদের ফসল রক্ষায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন এবং ফসল রক্ষা বাঁধগুলো সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণ করছেন বলেও জানান ইউএনও।
এদিকে জেলার হাওর উপজেলা মোহনগঞ্জ, মদন ও কেন্দুয়ার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ও কৃষকদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন বলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে।