আনিসুর রহমান,স্টাফ রিপোর্টারঃ একসময় উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের গ্রামেগঞ্জে দেখা মিলতো ছনের ঘর বা কুঁড়েঘর। বাঁশ, চাটাই, ছন দিয়ে তৈরি করা হতো এ ঘর। এ ঘর গরমে যেমন ঠান্ডা তেমনি শীতকালে গরম। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে ‘গরিবের এসি’ হিসেবেও পরিচিত এটি।আধুনিকতার ছোঁয়ায় এগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়।
জেলার গ্রামগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সব জায়গায়। প্রত্যন্ত গ্রামেও এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। কোথাও ছনের ঘরের অস্তিত্ব নেই।একসময় যেখানে দেখা মিলতো অসংখ্য ছনের ঘর,এখন সেখানেই গড়ে উঠেছে টিনের ঘর ও আধাপাকা দালান।ছন খড় দিয়ে তৈরি আরামদায়ক এ ঘরে দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি বিত্তবানরাও পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন। মানুষের বসবাসের পাশাপাশি তৈরি করা হতো রান্নাঘর, গোয়ালঘর ও ঢেঁকিঘর। এখন এ ঘরের পরিবর্তে নির্মাণ করা হচ্ছে টিন বা ইটের তৈরি পাকা দালান।
রাজারহাট উপজেলার মিলের পাড় এলাকার ছন খড় দিয়ে তৈরি করতেন এমন প্রবীণ কারিগরের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।তিনি বলেন একসময় ছনের ঘরের কারিগর ছিলাম আমি, কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারি না। তিনি বলেন, ‘একসময় উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে প্রচুর ছনের খড়ও গমের আবাদ হতো।এসব ছন খড় ও গম কেটে বাঁশ, চাটাইয়ের মাধ্যমে খুবই কম খরচে তৈরি করা হতো এ ঘর। শুধু মানুষের থাকার ঘর নয়; রান্নাঘর, ঢেঁকিঘরেও ব্যবহার করা হতো ছন। কিন্তু বর্তমানে যেসব স্থানে ছনের আবাদ করা হতো এখন সেসব জায়গায় শস্য আবাদ ও বাগ বাগিছা করা হচ্ছে। কালের পরিক্রমায় এসব ঘর হারিয়ে গেছে।
কথা হয় রাজারহাট সদর ইউনিয়নের হরিশ্বর তালুক গ্রামের গ্রন্থ কুটির পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক,ও কবি, আবু সাইদ মোল্লা তার সাথে তিনি বলেন,ছনের ঘর বা কুঁড়েঘর ছিল গ্রামীণ ঐতিহ্য। এখন এ ধরনের ঘর তেমন চোখে পড়েনা।
কথা হয় প্রেসক্লাব রাজারহাটের সম্পাদক, রফিকুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন,ছনের ঘর শীতকালে যেমন ছিল গরম তেমনি গরমে ছিল ঠান্ডা। তবে ছন এখন আর চোখেই পড়ে না।
রাজারহাট উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুনুর মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, কালের বিবর্তনে আজ ছনের ঘরগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় তাদের বাড়িতে ছনের ঘর ছিল। যে ঘরে তারা বসে সাচ্ছন্দবোধ করত। সন্ধ্যা হলেই বোঝা যেত ঘরগুলো যেন এক শান্তির চাদর। তিনি আরো বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামবাংলার আবহমান ঐতিহ্যের ছনের ঘর রূপকথার গল্প কথনের মতো এক সময় হয়ে যাবে।