ঢাকামঙ্গলবার , ৯ আগস্ট ২০২২
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আশিতেও থেমে নেই যার জীবনযুদ্ধ!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
আগস্ট ৯, ২০২২ ১১:০৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

যে বয়সে একজন মানুষ বিশ্রাম আর শুয়ে-বসে থেকে নাতি-নাতনীদের নিয়ে গল্প করে সময় কাটানোর কথা, ঠিক সে বয়সে এসেও যেন এতটুকু বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ নেই আশি বছরের বৃদ্ধ ভূমিহীন হাজী মজনু মিয়ার। তাঁর জীবনটা যেন এক রূপকথার গল্প।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের পশ্চিম সোনারায় গ্রামের চিন্তু শেখের ছেলে মজনু মিয়া। পড়াশোনা বলতে ছিল গ্রামের মক্তবে কোরান শিক্ষা পর্যন্ত। দশক পাঁচেক আগে বাবার মৃত্যুর পর বড় ছেলে হিসেবে মাসহ বাকি ৯ ভাইবোনের দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ে তার। বোনদের বিয়ে দেওয়াসহ সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে ফেরি করে বিক্রি করতেন বাদাম, শনপাপড়ি আর আইসক্রিম। আর তাতে যা আয় হতো তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে চলতো তাদের সংসার। ভাইবোনদের বিয়ের দাযিত্ব পালন শেষে যখন মজনু মিয়া পৃথক, তখন ৮টি মেয়ে সন্তানের বাবা হয়েছিলেন তিনি।

প্রায় ৬ ফুট উচ্চতার এ মানুষটি ধানের চারা চারা রোপণ, ধানকাটা, মাটি কাটা ও পাট কাটায় ছিলেন সমান পটু। এক-দেড় সের চালের ভাত অনায়াসে খেতে পারতেন তিনি। সংসার নামক ঘানি টানা আর মেয়েদের বিয়ে দিতে গিয়ে সম্পদ বলতে কিছুই করতে পারেননি মজনু।

বছর কুড়ি আগের কথা। ঢাকার শাহাজানপুরে চলে গিয়েছিলেন মজনু। সেখানে রেলওয়ে কলোনি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে যোগদান করেন তিনি। মসজিদ চত্বরে লাগিয়েছেন নাকি বেশকিছু গাছ। কোরবানির ঈদে ২০-২৫টি করে চামড়া পেলেও তা নিজে না নিয়ে ওই মসজিদেই দান করতেন খেটে খাওয়া মানুষটি। সততার কষ্টিপাথরে যাচাইকৃত বৃদ্ধ মজনুকে নাকি ভালোবাসতেন মুসল্লীরাও। ২০১৭ সালের দিকে তাঁদেরই কেউ কেউ
পবিত্র হজ্জব্রত পালনে উৎসাহিত করেছিলেন তাঁকে। কিন্তু সাধ থাকলেও হজ্জ করার সামর্থ ছিল না মজনুর। হজ্জের নিয়ত করে পাসপোর্ট করেছিলেন শুধু। এরপর আর অপেক্ষা করতে হয়নি মজনুকে। মুসল্লীদের মধ্যে যাঁরা তাঁকে উৎসাহিত করেছিলেন তাঁরাই এগিয়ে এসেছিলেন সহযোগিতার হাত নিয়ে, দিয়েছিলেন ৫-১০ হাজার করে টাকা । সেই টাকা দিয়েই ২০১৮ সালে পবিত্র হজ্জ পালন করেছিলেন মজনু মিয়া। হজ্জ শেষেও হাতে অবশিষ্ট ছিল নাকি হাজার পঞ্চাশেক টাকা। পবিত্র হজ্জ পালন শেষে আবার ওই মসজিদে ফিরেন তিনি। বয়স হয়েছে হাজী মজনু মিয়ার। এবার বাড়ি ফেরার পালা।

বাড়িতে ফিরলেনও বটে। কিন্তু পেট তো আর বয়স মানে না! সম্পদ বলতে তো ওই বসতভিটার ৫ শতক জমি। ছেলে না থাকায় স্ত্রীকে লিখে দিয়েছিলেন তা অনেক আগেই। তাই তো জীবন সায়াহ্নে এসেও আবার জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি। এবার পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে একটি ভাঙাচোরা ভ্যান কিনেন হাজী। আশি বছরের বৃদ্ধ হয়েও রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেই ভ্যান চালিয়ে সুন্দরগঞ্জ, মীরগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন রাস্তায় রাস্তায় কখনো আম, কখনো কাঁঠাল, কখনো লিচু আবার কখনো বা আনারসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল বিক্রি করেন হাজী মজনু। দিন শেষে ৩০০-৪০০টাকা যা আয় হয় তা দিয়েই কেটে যায় স্বামী-স্ত্রীর সংসার।

সোমবার দুপুরে ধবধবে সাদা গোল পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা পরে ভ্যানে আনারস নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ হাজী মজনু মিয়া। তীব্র গরম আর রোদে বেশ ক্লান্ত মনে হচ্ছিল তাঁকে। সেখানেই কথা হয় তাঁর সাথে। বললেন, আট মেয়ের কথা। রয়েছেন স্ত্রী আয়েশা খাতুনও। নাতিনাতনি রয়েছে ১১ জন। কেউ দেখে কি না, জানতে চাইলে বলেন, মেয়েদেরই তো চলে না, দেখবে কীভাবে!
এই বৃদ্ধ বয়সেও খেটে খাওয়ার ভয় করেন না হাজী মজনু মিয়া। বললেন, “এখনো যুবকদের চেয়েও গায়ে শক্তি দিয়েছেন আল্লাহ। ধানের চারা তুলে দিনে অন্তত আধা বিঘা জমিতে ধান রোপণ করতে পারেন তিনি। পাট কাটতে পারেন জওয়ানদের চেয়ে দ্রুত। ধান কাটতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার।” এখনো কী আগের মতো খেতে পারেন? “এখনো আধা কেজির বেশি চালের ভাত খেতে পারি,” বলেন হাজী মজনু মিয়া। একথা বলেই প্রতিবেদকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। বললেন,”বয়স্ক ভাতা পেয়েছিলাম সেই শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ঠিকানায়। এখন আর পাই না। কেউ যদি দয়া করে ওই ভাতাটা এখানকার ঠিকানায় ঠিক করে দিতেন! দোয়া করতাম তার জন্য।
লেখক: এম এ মাসুদ
সাংবাদিক ও কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন