ঢাকাবুধবার , ৩১ আগস্ট ২০২২
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

না পারি কবর জিয়ারত করতে, না পারি মিলাদ পড়াতে

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
আগস্ট ৩১, ২০২২ ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সাত বছর ধরে নিখোঁজ গুলশান থানা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমানকে খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁর বাবা শফিকুর রহমান। এ অবস্থায় শফিকুর আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমরা না পারি একটা কবর জিয়ারত করতে, না পারি একটা মিলাদ পড়াতে। আমরা কোন দিকে যাব?

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এভাবেই নিজের আক্ষেপ প্রকাশ করেন সাইফুর রহমানের বাবা শফিকুর রহমান।

সাইফুর রহমান ওরফে সজীব ২০১৫ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন। শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, আমার ছেলের নামে একটা সাধারণ ডায়েরি বা একটা মামলা প্রশাসন দেখাক। আমি র‍্যাবে গেছি, ভাটারা থানায় পাঁচ থেকে ছয় দিন সকালে যেতাম বিকেলে আসতাম। আমার সাধারণ ডায়েরি তারা নেয়নি। পরে অনেক কষ্ট করে সাধারণ ডায়েরি করেছি।’

ছেলের জন্য কান্না করতে করতে তাঁর মা মারা গেছেন জানিয়ে শফিকুর বলেন, ছেলের শোকে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই সরকারের কাছে তাঁর আর চাওয়ার কিছু নেই। একমাত্র আল্লাহর কাছে বিচার চান তিনি।

একই কর্মসূচিতে বংশাল থানার তৎকালীন ৭১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেন ওরফে রেজার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে আদিবা ইসলাম ওরফে হৃদি তার বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানায়। মেয়েটি বলে, ‘আমার বাবাকে ছাড়া আর ভালো লাগে না। আমি আমার বাবাকে চাই। আমি বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলতে বলতে ছোট থেকে বড় হয়ে গেছি। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। কতবার বলছি ফিরিয়ে দিন। বাবার সঙ্গে আমি ঘুরতে চাই। আমার কষ্ট লাগে। আমার ভাই আমার বাবাকে দেখেনি। সে বলে বাবা কবে আসবে? আমার বাবা কই?’ ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ পারভেজ রেজা।

বংশাল থানা ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. সোহেলের মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিকা সরকার ওরফে সাফা বলে, ‘আট বছর ধরে আমার বাবা নিখোঁজ। আমি আমার বাবাকে একবারও দেখিনি। তাকে দেখতে খুব ইচ্ছা হয়। সরকারের কাছে একটাই দাবি, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেন। তাঁকে দেখতে চাই। তাঁকে ছাড়া ভালো লাগে না। বাবার আদর পাইনি, স্নেহ পাইনি। কেন? আমার কষ্ট হয়। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেন।’

সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা ওরফে পিন্টুর বোন রেহেনা বানু বলেন, ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর মাঝরাতে বাসা থেকে সাত–আটজন অস্ত্রধারী প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে তাঁর ভাইকে তুলে নিয়ে যান। এখন পর্যন্ত ভাইয়ের কোনো হদিস পাননি। ঘটনার সময় ভাই খুব অসুস্থ ছিলেন জানিয়ে রেহেনা বলেন, ‘ভাইকে নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, আমরা প্রশাসনের লোক, তাকে ফিরিয়ে দেব।’

এরপর অনেক কষ্টে এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করতে পেরেছেন বলে জানান রেহেনা বানু। তিনি বলেন, ‘থানায় গিয়েছি মামলা করার জন্য, মামলা নেয়নি। পরে আদালতে গিয়ে মামলা করেছি। আমার বাবা কষ্টে, শোকে মারা গেছেন। মা আজ পাগলপ্রায়। কিন্তু কেন আমার ভাইকে গুম করা হবে? ও যদি কোনো অন্যায় করে, দেশে আইন আছে, বিচার করা হতো। কিন্তু কেন গুম করা হলো?’প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রেহেনা বলেন, ‘আপনি মাদার অব হিউম্যানিটির পুরস্কার পেয়েছেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচার করেছেন। আপনি আপনার পিতার হত্যার বিচার করেছেন। আমার ভাই ৯ বছর ধরে গুম হয়েছে। অনেকেই গুম রয়েছে। এটা কি মানবতাবিরোধী অন্যায় নয়? আপনাকে এর বিচার করতে হবে। আপনি বিচার না করলে এ দেশের মানুষ বিচার করবে।’

ঢাকার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলামের (সুমন) বোন সানজিদা ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গুম করার পর অস্বীকার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকে তুলে নিয়ে গিয়ে তারা এখন মিথ্যা কথা বলছে। তিনি বলেন, দেশে মানুষের বেঁচে থাকার মতো অবস্থা নেই। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এসব ঘটনা তদন্তের দাবি জানান তিনি।সানজিদা ইসলাম আরও বলেন, ‘আইনের বাইরে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে সদস্যরা এই কাজে লিপ্ত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। যত আয়নাঘর আছে, সে নামে, যেখানে হোক আমাদের ভাইকে লুকিয়ে রাখেন না কেন, তাদের জীবিত ফেরত দিতে হবে। কত দিন লুকিয়ে রাখবেন, কত দিন মিথ্যা কথা বলবেন। আমাদের সব ভাইকে আয়নাঘরের মতো বন্দিশালা থেকে ফেরত দেন। আমরা রাজপথ ছাড়ব না। সবাই একসঙ্গে থাকলে আন্দোলন সার্থক হবে। সবাইকে জীবিত অবস্থায় পরিবারে ফিরিয়ে আনব।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এ সময় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও বক্তব্য দেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন