ঢাকাশনিবার , ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বক্তব্যে উস্কানি, মাঠে সংঘাত!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

অমরেশ রায় ও কামরুল হাসান,প্রতিদিনের বাংলাদেশঃ উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে মাঠের রাজনীতি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনও ১৫ মাস বাকি। দেশের বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে রাজপথের মিছিল-সমাবেশ নিয়ে প্রায়ই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।

জুলাইয়ের শেষভাগ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশের গুলি ও হামলাকারীদের আঘাতে বিএনপির চার কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা অনেক। এ অবস্থায় আবার দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের পারস্পরিক হুমকি-ধমকিসহ উস্কানিমূলক বক্তৃতা নাগরিক সমাজে উদ্বেগ ও শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। মন্তব্য জানতে চাইলে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি রাজনৈতিক শক্তির প্রতি গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতার আহ্বান জানিয়েছেন।

সম্প্রতি বিএনপি সভা-মিছিল বের করলেই বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশ হামলা চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। অনেকের নামে মামলা হয়। তা মিডিয়ায় প্রকাশ পেতে থাকে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ নেতারা হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দলের পাশাপাশি দলটি সরকারবিরোধী আন্দোলনে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে বলে পুলিশ স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলার ব্যবস্থা নিচ্ছে শুধু। এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে বিএনপি নেতারা অবশেষে কর্মীদের ‘আত্মরক্ষার জন্য’ লাঠি নিয়ে মিছিলে নামতে আহ্বান জানান। এবং তা ঘটতে থাকায় উত্তেজনা ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি বাড়ে।

সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থানে জুলাইয়ের শেষ থেকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছিল। ওই সময় থেকেই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে সরকারবিরোধী প্রধান দল বিএনপি ও তার মিত্ররা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারাও ‘আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না’- এমন ঘোষণা দিয়ে এ আন্দোলনকে কঠোর হস্তে প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়ে আসছিলেন।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ইস্যুতে ২৯ জুলাই থেকে বিএনপি সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে এবং আওয়ামী লীগের তরফে বাধা দেওয়া শুরু হলে সংঘাত-সহিংসতা শুরু হয়।

পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষে জুলাইয়ের শেষ ও আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ভোলায় দু’জন ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে নারায়ণগঞ্জে একজন নিহত হন। সর্বশেষ গত বুধবার মুন্সীগঞ্জ জেলার মুক্তারপুরে পুলিশের হামলায় আহত হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার একজনের মৃত্যু হয়। অর্থাৎ বড় কোনো রাজনৈতিক কারণ ছাড়াই আট সপ্তাহে সংঘাতে ৪ তরুণের প্রাণ ঝরে গেল। তাঁরা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী।

ঘোষণা দিয়ে ২২ আগস্ট থেকে সারাদেশে ধারাবাহিক কর্মসূচির পাশাপাশি ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা মহানগরের উত্তর ও দক্ষিণে ১৬টি সমাবেশ কর্মসূচি শুরু করেছিল বিএনপি। এসব কর্মসূচি প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো পাল্টা কর্মসূচি দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অনেক জায়গাতেই সরকার সমর্থকদের বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে বিএনপিকে মোকাবিলায় নামতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

‘পুলিশ আঙুল চুষবে?’ :গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভোলার ঘটনা কে ঘটিয়েছে, ভিডিও ফুটেজ দেখুন। কীভাবে ঘটেছে, কারা আক্রমণ করেছে, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারা মিছিল করেছে, কারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে? পুলিশ কী করবে? আঙুল চুষবে?’
তিনি বলেন, ‘আবারও আগুন সন্ত্রাস করে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় বিএনপি। আমরা প্রস্তুত আছি।’

‘খেলা হবে’ :পরে ১৭ আগস্ট ওবায়দুল কাদেরের বহুল আলোচিত ‘খেলা হবে, মোকাবিলা হবে’ বক্তব্য আসে। ওই দিন দলীয় এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘বন্দুকের নল থেকে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। রাজপথ থেকেই আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে। খেলা হবে, খেলা। রাজপথে মোকাবিলা হবে। খেলা হবে নির্বাচনে, খেলা হবে রাজপথে। কী নিয়ে খেলবেন? ধরা খাবে বিএনপি।’

এর আগে ১৩ আগস্ট ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে রাজপথের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। নৈরাজ্যের পথ ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের পথে হাঁটুন, নির্বাচনকে মোকাবিলা করুন। আগস্ট মাসটা যেতে দেন; তারপর টের পাবেন কত ধানে কত চাল।’

একই দিন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় আরেকটি আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিএনপির প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমরা রাজপথে এখনও নামিনি; আগামী মাসে পরিপূর্ণভাবে নামব। রাজপথে নামলে বিএনপি পালানোর জায়গা খুঁজে পাবে না। বিএনপিকে অবশ্য সারাদেশে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাদের খুঁজে পাওয়া যায় নয়াপল্টনের অফিস ও প্রেস ক্লাবের সামনে। বিএনপির সেসব সমাবেশে এখন অনেক নেতাকর্মীকে দেখতে পাচ্ছি; তাদের কীভাবে গর্তে ঢোকাতে হয়, সেই ওষুধ আমাদের জানা আছে। প্রয়োজনে প্রয়োগ করা হবে।’

‘পাল্টা খেলা’ :সরকারি দল ও পুলিশের অব্যাহত হামলা-মামলার মুখে সারাদেশে কোণঠাসা হলেও বিএনপি নেতাদের পাল্টাপাল্টি হুংকার-হুঁশিয়ারিও থেমে নেই। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিলেও দলটির অন্যান্য পর্যায়ের নেতারা ‘হামলা হলে’ ‘পাল্টা প্রতিরোধ’-এর ঘোষণা দিচ্ছেন। নেতাকর্মীদের সাহস জোগাতে সরকারি দলের ‘খেলা হবে’ বক্তব্যের জবাবে ‘পাল্টা খেলা হবে’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন। নিজেদের নিরাপত্তায় ‘বাঁশের লাঠি’ হাতে নিতে বলেছেন কেউ কেউ।

এর মধ্যে গত ৪ সেপ্টেম্বর দলীয় এক সমাবেশে আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের খালি হাত, আপনারাও খালি হাতে আসেন। পুলিশ ছাড়া আসেন। দেখি, কার কত ক্ষমতা! আর যদি বলেন লগি-বৈঠা; সেটাও সই। আমরা নিয়ে আসব।’

আর নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে যুবদল কর্মী শাওনের মৃত্যুর প্রতিবাদে আয়োজিত এক সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদেরও বন্দুকের লাইসেন্স দিন। আমরাও বন্দুকের লাইসেন্স চাই। বন্দুক দিয়ে বন্দুক মোকাবিলা করব। সমানে-সমানে লড়াই হবে।’

গত বুধবার আরেক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আন্দোলনের প্রস্তুতি ম্যাচ চলছে। ফাইনাল খেলা এখনও শুরু হয়নি। এর পর মোটা মোটা বাঁশের লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। কাউকে আঘাত করার জন্য নয়; চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের আত্মরক্ষার জন্য রাখতে। আঘাত এলে তো পাল্টা আঘাত করতেই হবে।’

গত সোমবার মহাখালীর সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ খামচাখামচি করছে। কিন্তু এসবে বিএনপি ভয় পায় না। বিএনপি ধরে ধরে ধরে না। ধরলে আবার ছাড়ে না। এখনও খেলা শুরু হয় নাই। এটা ওয়ার্মআপ চলছে। আসল খেলা বাকি আছে এখনও।’

বিশিষ্টজনের বক্তব্য :সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহ্‌দীন মালিক সমকালকে বলেন, প্রচণ্ডভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান ও হুমকি-ধমকি বড় সংকটাবস্থার পূর্বাভাস। এটা ক্রমাগত অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির ইঙ্গিতও বহন করছে। তাই উভয় দলকে পারস্পরিক বিরুদ্ধ অবস্থান থেকে সরে এসে সমঝোতার জন্য কিছু কমন গ্রাউন্ড তৈরি করতে হবে। তা না হলে দেশ, জাতি ও সমাজের অমঙ্গল অবধারিত।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ বলেন, সংঘাত-সহিংসতাময় বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রধানতম উপায় হচ্ছে একে অপরের প্রতি গণতান্ত্রিক আচার-আচরণ দেখানো এবং পরমতসহিষুষ্ণতা প্রদর্শন করা। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের প্রতিও প্রত্যেককে শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।

তিনি বলেন, তবে বিএনপি দীর্ঘদিন পর মাঠে নামার সুযোগ পেলেও তাদের দলের মধ্যেও কিন্তু উগ্রপন্থিরা রয়েছে, যাঁরা উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখে পরিস্থিতি আরও অসহনশীল করে তুলছেন। তাঁদের উস্কানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতি কোথায় নিয়ে যায়- এটা তাদের বুঝতে হবে এবং এমন অপতৎপরতা থেকে বিএনপিকেও সরে আসতে হবে। পাশাপাশি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ তো কোথাও হামলা করছে না; বরং বিএনপিই সারাদেশে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস-সহিংসতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করছে। তারা এমনকি পুলিশের ওপরও হামলা চালিয়ে উস্কানিমূলক অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা আওয়ামী লীগই তৈরি করছে দাবি করে বলেন, সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। আওয়ামী লীগও করুক। সেখানে বিএনপি তো কোনো বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু তারা শুধু বক্তব্য-বিবৃতিতে হুংকার দিয়েই ক্ষান্ত থাকছে না, বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচিতে হামলা করছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন