ঢাকাশনিবার , ৩ জুন ২০২৩
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিএনপি এবার ভিন্ন পথে- ‘উৎসাহী’ পুলিশের তালিকা করছে বিএনপি!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
জুন ৩, ২০২৩ ৮:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

তাহমিনা আক্তার, ঢাকাঃ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতে বাংলাদেশের জন্য মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও চাপ কাজে লাগিয়ে দাবি আদায় করতে চায় রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি।

দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় থাকায় আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্যদের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের ওপরও চাপ তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলন সফলে পুলিশের অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তাকে মূল প্রতিবন্ধক হিসেবেও মনে করেন তারা। তাই নির্বাচন ও চূড়ান্ত আন্দোলন সামনে রেখে এসব কর্মকর্তাকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এর অংশ হিসেবে আন্দোলনের পাশাপাশি গায়েবি মামলা এবং গুম-খুন-নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ লক্ষ্যে দলের মামলা ও তথ্য সংগ্রহ কর্মকর্তা সাবেক ওসি সালাহ উদ্দিন খানকে কন্টাক্ট পারসন করে একটি সেল গঠন করেছে বিএনপি। আর এ কাজে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি চেয়ে গত ১৮ ও ২৩ মে দেশের ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় পৃথক তিনটি চিঠি পাঠিয়েছে দলটি। এতে গুম-খুন, নিপীড়ন, গায়েবি মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের নাম এবং তাদের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, জেলা-মহানগরের নেতারা আন্দোলনে নেতাকর্মীদের ওপর হামলাকারীদের ছবি, ভিডিওসহ যাবতীয় তথ্যও সংগ্রহ করবেন। চিঠি পাওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে কেন্দ্রে পাঠাবেন তারা। এরপর জেলার এসব তথ্য-প্রমাণ সমন্বয়ে নথি ও ভিডিও ডকুমেন্ট তৈরি করবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেল, যা পরবর্তী সময়ে ঢাকাস্থ দূতাবাসের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে গুম-খুনের ঘটনা ঘটছে। কারা এটি করছে, কাউকে জড়িত মনে হলে জেলা-মহানগরের নেতারা তাদের তথ্য কেন্দ্রকে অবহিত করবে।’ তথ্য-উপাত্ত কেন্দ্রে পাঠানো শুরু হয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিঠিটা কেবলই গিয়ে পৌঁছাল।

এখনো কোনো তথ্য হাতে পাইনি। তবে শিগগিরই আসা শুরু হবে।’ তথ্য পাওয়ার পর বিএনপি সেটি নিয়ে কী করবে—এমন প্রশ্নে দলটির এই নেতা বলেন, ‘আগে আসুক, তারপর সেটি এনালাইসিস করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িতদের ভিসা দেবে না দেশটি। এই নীতির আওতায় কারা পড়বেন, তাও জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এর অন্তর্ভুক্ত হবেন। নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা কাজের ব্যাখ্যাও দেয় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা জানায়, এগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া।

মার্কিন এই ভিসা নীতির প্রেক্ষিতে বিএনপির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই পদক্ষেপে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ওপর চাপ আরও বেড়েছে, যা আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তবে এটিই সবকিছু নয়। কারণ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, আর সে দাবি এখনো আদায় হয়নি। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতি ও চাপ কাজে লাগিয়ে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হবে। আর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল বিএনপি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সংগঠন গুছিয়ে গত ২২ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামে বিএনপি। তৃণমূলে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়ে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এরপর ২৪ ডিসেম্বর থেকে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি, যেখানে ৩৯টি দল সম্পৃক্ত হয়েছে। এই আন্দোলন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ১৭ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। বিএনপির দাবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে তারা নিহত হয়েছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই কার্যক্রম শুরু হয়। দলটির অভিযোগ, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা এ কাজে জড়িত। বিএনপি নেতারা বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহ্বান জানান।

গত বছরের অক্টোবরে চট্টগ্রামে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘অতি উৎসাহী’ পুলিশ সদস্যদের তালিকা করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তখন তিনি বলেন, ‘পুলিশ নাকি বিএনপির নেতাকর্মীদের তালিকা করছে। অতি উৎসাহী কিছু পুলিশের সদস্য ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তালিকা আপনারা তৈরি করেন।’ দলের সাম্প্রতিক বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকেও পুলিশের অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের তালিকা করা হচ্ছে বলে বিএনপি নেতারা জানান।

জানা গেছে, গুম-খুন-সংক্রান্ত পৃথক দুটি চিঠির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলার গুম-খুন হওয়া দলীয় নেতাকর্মীদের তালিকা পাঠিয়ে পাঁচ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো— গুম-খুন হওয়া নেতাকর্মীদের নাম ও ঠিকানা; গুমের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ও টেলিফোন নম্বর/খুন হওয়া মামলার বাদী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয়ে থাকলে তার নাম ও টেলিফোন নম্বর; মামলা হলে রুজুকারী কর্মকর্তার নাম, পরিচয় ও টেলিফোন নম্বর (যদি থাকে); মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম, পরিচয় ও টেলিফোন নম্বর (যদি থাকে); ওই সময়কার সংশ্লিষ্ট সার্কেল এএসপি/এডিসি/এসি জোন এবং এসপি/ডিসি জোনের নাম, পরিচয় এবং টেলিফোন নম্বর। অন্যদিকে গায়েবি মামলা-সংক্রান্ত চিঠিতে মামলা রুজুকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম ও পরিচয়, ওই সময়কার সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সার্কেল এএসপি/এডি.এসপি (মেট্রোর ক্ষেত্রে এসি-জোন) এবং এসপির (মেট্রোর ক্ষেত্রে ডিসি-জোন) নাম ও পরিচয়—এই চার ধরনের তথ্য কেন্দ্রে পাঠাতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় সম্প্রতি চিঠি দিয়ে দলের গুম-খুন হওয়া নেতাকর্মীদের নাম এবং গায়েবি মামলার তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। এসব গুম-খুনের সঙ্গে কাউকে জড়িত মনে হলে সেই কর্মকর্তার নাম-পরিচয়ও পাঠাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতাকর্মীদের ওপর যেখানে যা হামলা-নির্যাতন হচ্ছে, হামলাকারীদের ছবি তুলে পাঠাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনাস্থলে না থাকলেও সংশ্লিষ্ট হামলার সঙ্গে যিনি বা যারা নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী থাকবেন, তাদের বিষয়েও খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। সংগৃহীত এসব নথি যথাসময়ে ব্যবহার করা হবে।

কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এতদিন তারাই খালি আমাদের তালিকা করে, এবার আমাদের তালিকা করা শুরু হলো।’

এদিকে কেন্দ্রের চিঠি পেয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন জেলা-মহানগরের নেতারা। এ প্রসঙ্গে নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে চিঠি পেয়েছি। প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শেষ পর্যায়ে। অতি দ্রুত আমরা কেন্দ্রে রিপোর্ট জমা দেব।’

আপনার মন্তব্য লিখুন