ঢাকারবিবার , ১২ জুন ২০২২
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস: গড়ে উঠুক শিশুরা দক্ষ মানবসম্পদ রূপে

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
জুন ১২, ২০২২ ৪:৪০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। দেশের মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শিশু। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই দেশের সম্পদ। অথচ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত এ শিশুরা যেভাবে পরিচর্যার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠার কথা তারা তা পাচ্ছে না। দারিদ্র্যের কারণে অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের পুষ্টিকর খাবার দিতে পারেন না। বিনামূল্যে পাঠ্য বই পেলেও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে না পেরে শিশু সন্তানদের কাজে লাগিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা। নদী ভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এমনকি অনেক সময় গ্রাম্য মহাজনদের দেনা মেটাতে না পেরে পাড়ি দেয় শহরে। রেল লাইনের ধার, পরিত্যক্ত কোনো স্থান কিংবা ডোবার উপর বস্তি ঘরে ঠাঁই হয় তাদের যেখানে নেই মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর সুযোগ।

তিন বেলা আহার জোটাতে হিমসিম খেতে হয় তাদের। লেখাপড়ার খরচ যোগান দিতে না পেরে এবং সংসারের অসচ্ছলতার গ্লানি একজন মা-বাবাকে বাধ্য করে তার সন্তানকে শ্রমে নিযুক্ত করতে। শিশুরদেরও বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে খুব ছোট বেলা থেকেই ঝুঁকে পড়তে হয় অর্থ উপার্জনের দিকে। বাবামায়ের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হয় তাদের। করতে হয় কাজ।

অনেক সময় বাবার অকাল মৃত্যুতেও কাজ করতে হয় শিশুদের। আজ প্রতিদিনের সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘শিশু সঞ্জয়ের স্বপ্নে আজ গুড়ে বালি।’ সিরাজগঞ্জের রায়হঞ্জে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু সঞ্জয়কে বাবার অবর্তমানে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। শিশু সঞ্জয় অর্ধেক বেলা স্কুলে পড়ে আর অর্ধেক বেলা জুতা পালিশের কাজ করে বেড়ায়। দিন শেষে বড় (কিশোর) ভাই মিলে কাজ করে যা পায়, তা দিয়ে চলে তাদের ৬ সদস্যের অভাবী সংসার।
সঞ্জয়ের মতো অনেক শিশুই বাধ্য হয় শ্রম বিক্রি করতে। পাথর ভাঙা, ইট ভাঙা, ইটের ভাটা, হোটেল শ্রমিক, আবর্জনা কুড়ানো, ফুল বিক্রি, চানাচুর ও বাদাম বিক্রি, বিড়ি শ্রমিক, রিকশা চালানোসহ বিভিন্ন কাজে শিশুশ্রমের ক্ষেত্র বেশ প্রসারিত হওয়ায় স্বল্প মজুরিতে কাজ করে শিশরা। কৃষক বাবা-মা কৃষি কাজে লাগিয়ে দেন শিশু বয়স থেকেই। শিশুশ্রম সস্তা বলে শহর, বন্দরের মানুষের দোকানপাট, এমনকী বাসাবাড়ির কাজের লোক এই শিশুরাই।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা। ঝরে পড়েছে অনেক শিশু বিদ্যালয় থেকে। কাজ করছে তারা বিভিন্ন হোটেলে শ্রমিক হিসেবে। নির্মাণ কাজে রাজমিস্ত্রির সাথেও কাজ করছে কেউ কেউ। চালাচ্ছে রিকশা ও অটোরিকশা। পড়াশোনা করে জীবনের পরিবর্তন ঘটানো যায় এমন ধারণা বাবা-মা এমনকী তাদের মধ্যে অনুপস্থিত।
কাজে যোগদানের সর্বনিম্ন বয়স সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন ১৩৮ অনুসারে ১৪ বছরের নিচে কাউকে কাজে নিয়োগ দেয়া যাবে না। তারপরও সভ্যতার এ যুগে শিশুদের দিয়ে অমানবিক কাজ করানো হচ্ছে। করানো হচ্ছে ভারী কাজ। পান থেকে চুন খসলেই কৈফিয়ত চাচ্ছেন মালিকরা। করছে শিশুদের লাঠিপেটা, গায়ে ঢেলে দিচ্ছে গরম পানি, খোঁচা দিচ্ছে গরম খুন্তি দিয়ে এমন ঘটনার খবর প্রায়ই আসছে বিভিন্ন মিডিয়ায়।

তাছাড়া কিছু অসাধু মানুষ অনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে শিশুদের। প্রাপ্ত বয়স নয় বলে বঞ্চিত করা হয় তাদের প্রাপ্য মজুরি থেকে। জন্মই যেন আজন্ম পাপ এসব শিশুর!

মানবাধিকার পরিপন্থী কাজ হলো শিশুশ্রম। শিশুশ্রম কেবলমাত্র বাংলাদেশই নয় বিশ্বের সব দেশেই কমবেশি রয়েছে। তবে উন্নত দেশের তুলনায় অনুন্নত দেশে খানিকটা বেশি। যারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তারা অকালে কায়িক শ্রম এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অকর্মণ্য হয়ে বেড়ে উঠছে। অল্প বয়সে শ্রমে নিয়োজিত থাকার ফলে শিশুরা অপুষ্টিসহ নানা রোগে ভোগে, ঘটে স্বাস্থ্যহানি। যেহেতু কাজে নিয়োজিত শিশুরা পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত থাকে, তাই পরিণত বয়সে তাদের দ্বারা জাতির কোনো উপকারতো হয়ই না বরং অনেক সময় সম্পদ না হয়ে দায় হয়ে পড়ে তারা।

‘চাইল্ড লেবার: ট্রেন্ডস অ্যান্ড দ্য রোড ফরওয়ার্ড’র এক প্রতিবেদনে শিশুশ্রমে নিযুক্ত ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে, যে শিশুদের সংখ্যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রমে নিয়োজিত মোট শিশুর অর্ধেকের কিছু বেশি। যারা স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও নৈতিকতার ক্ষতি করতে পারে এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, মহামারির কারণে ২০২২ সাল সমাপ্ত হওয়ার আগেই বিশ্বব্যাপী অতিরিক্ত ৯০ লাখ শিশু শ্রমে নিযুক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। শিশুশ্রমে নিয়োজিত ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় ২৮ শতাংশ এবং ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ৩৫ শতাংশ স্কুলের বাইরে রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে শিশুদের শ্রমে নিযুক্ত হওয়ার হার ১৪ শতাংশ ও শহরাঞ্চলে তা ৫ শতাংশ।
শিশুশ্রম শিশুদের পড়াশোনাকে ব্যাহত করে, তাদের অধিকার ও ভবিষ্যতের সুযোগগুলোকে সীমিত করে দেয়। তাদের দারিদ্র্য ও শিশুশ্রমের আন্তঃ-প্রজন্মগত দুষ্টচক্রে পড়ার দিকে ধাবিত করে। শিশুশ্রমের এই পরিণতি থেকে পরিত্রাণ পেতে শুধু আইন করে শিশুশ্রম বন্ধ করা যাবে এমনটি আশা করা যায় না। এজন্য বাড়াতে হবে মানসম্মত শিক্ষার পেছনে ব্যয় এবং কোভিড-১৯-এর আগে থেকেই স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদেরসহ সব শিশুকে ফিরিয়ে আনতে হবে স্কুলে। বৃদ্ধি করতে হবে জনসচেতনতা। বাড়াতে হবে সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা। সরকারি এবং বেসরকারিভাবে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে প্রাপ্ত বয়স্কদের, যাতে করে শিশুদের কাজ করতে না হয়।
তবেই নিশ্চিত হবে সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণ এবং বন্ধ হবে শিশুশ্রম। গড়ে উঠবে শিশুরা দক্ষ মানবসম্পদ রূপে, ঘটবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবসে সেই প্রত্যাশা সবার।

লেখকঃ এম এ মাসুদ,
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
masud.org2018@gmail.com

আপনার মন্তব্য লিখুন