ঢাকাসোমবার , ২৮ মার্চ ২০২২
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাখাল থেকে আদর্শ শিক্ষক হয়ে ওঠার গল্প

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
মার্চ ২৮, ২০২২ ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

অনেক দিন আগের কথা। এক ছোট গ্রামে বাস করতো এক চাষী। তার ছিল কিছু কৃষি জমি। ছেলেমেয়েও ছিল বেশ ক’জন। তখনকার দিনে আধুনিক কালের মতো সেচ ব্যবস্থা না থাকায় ফাগুনের হাওয়ায় মাঠ ফেটে হতো চৌচির। যেখানে খালি পায়ে হাটাও ছিল কষ্টকর। এমন চৌচির জমিতে তিনি চাষ করতেন আউশ ধান, গম ও পাট। জমি তৈরি করতে হতো গরুর হাল দিয়ে আর জমিতে ভেসে থাকতো বড় বড় ঢেলা।

সেই ঢেলা ভাঙতে ব্যবহার করতেন কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি কুশ্শি। এতো খাটুনির পর পাট ভালো হলেও ভালো হতো না আউশ। বিঘায় ফলত দুই-তিন মন, যা দিয়ে পরিবারের ব্যয় মেটাতে পারতেন না কৃষক।
মেজাজ ছিল সব সময় তিরিক্ষি। সংসারের ঘানি টানতে একা আর পেরে উঠছিলেন তিনি।

লেখাপড়া সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় বড় ছেলেকে দিলেন গবাদিপশু দেখাশুনার কাজে। ছোট্ট বালক অন্যান্য রাখালের সাথে গরু চড়াতে যেত মাঠে। মাঠের পাশেই ছিল প্রাইমারী স্কুল। মাঠে গরুগুলো ছেড়ে দিয়ে লাঠি(পেন্টি) হাতেই রাখাল দাঁড়িয়ে থাকতো জানালায়। উঁকি মেরে দাঁড়িয়ে থাকা রাখাল বালককে দেখেও কিছুই বলতেন না শিক্ষক। বার বার ছাত্রছাত্রীকে পড়াচ্ছেন শিক্ষক। কিন্তু পড়া দিতে পারছে না কেউ। কিন্তু রাখালের মুখস্ত হয়ে যায় সব। এমনটি হতো প্রতিদিন। রাখাল ভাবে, সারাদিন তো থাকতে হয় মাঠেই। গরু চড়াতে এসে স্কুলে পড়তে পারলে মন্দ হয় না! এমন ভাবনা থেকে রাখাল বাবাকে গিয়ে বলল, ক্লাস ওয়ানের বই কিনে দিতে। মেজাজ গরম হয়ে যায় বাবার। বললেন, লেখাপড়া করে কী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবে! বই কিনে দিবে না বাবা। কান্না পেয়ে যায় ছোট্ট মানুষটির। ভাবে পড়তে যে তাকে হবেই।কিন্তু বই কোথায় পাবে? বড় নাতি হওয়ায় নানা-নানি খুব আদর করতো রাখালকে। মাইল খানেক ফাঁকা মাঠ পেরুলেই নানা বাড়ি। বিকেল বেলা। নানা বই কিনে দিবে এই আশা নিয়ে ওই ফাঁকা মাঠ দিয়ে হাজির হয় নানার বাড়ির উঠোনে। নানা বেড়িয়েছে আসরের নামাজ পড়তে। দেখেই জড়িয়ে ধরে বলল, নানা আমাকে ক্লাস ওয়ানের বই কিনে দিবেন? আমি স্কুলে পড়বো। নানা জবাব দিলেন, তোর বাবা আছে না! সে কিনে দিবে।

ঘরের ভিতরে ঢুকলো রাখাল। পড়ার টেবিলে মামার বই দেখে চোখ ছলছল করে ওঠে তার। ভাবে ইচ্ছে পূরণ করতে এই বই ই যে তাকে নিতে হবে। নানির সাথে কথা বলে আবার ঘরে ঢুকে সে। কিন্তু একি! বই যে টেবিলে নেই। সরিয়ে রেখেছে কেউ। খুঁজতে থাকে রাখাল। মই বেয়ে ওঠে ছাদে, পেয়ে যায় সেখানে। জামার ভিতর লুকিয়ে নিয়ে চলে যায় বাড়িতে। এবার তার স্বপ্ন পূরণ হবে। একই সাথে চলে গরু চড়ানো ও স্কুলে পড়া। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। কয়েকদিন পর শিক্ষক বললেন, আগামীকাল রেজাল্ট হবে। তোমার বাবাকে বল স্কুলে আসার জন্য। রাখাল স্কুলে যেত তা জানতো না কৃষক। স্কুলে শিক্ষক ডেকেছে শুনে বাবা রেগে গিয়ে বললেন, হাল ছেড়ে আমি স্কুলে যাব, না! বাবার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় রাখালের। গরু ছেড়ে দিয়ে রেজাল্ট শুনতে স্কুলে যায় সে। ফার্স্ট হয়েছে জেনে কেঁদে ফেলে রাখাল। আগ্রহ বেড়ে যায় আরো। বই, খাতা, কলম কেনার জন্য স্কুলের ফাঁকে ফাঁকে অন্যের কাজ করে বেশ কয়েক সের চাল জমা হয় তার। বাবা জানতে পেরে বিক্রি করতে চায় সেই চাল। দেয় না সে।

একদিন জমানো চাল বিক্রি করতে গেলে বাজারেই মারতে থাকে বাবা। রাতে পড়তে বসলে নিবিয়ে দেয় বাতি। দিতে দেয়নি ক্লাস এইটের শেষ পরীক্ষাটিও। মনের কষ্টে রাতেই মাথায় ট্রাংক নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে রাখাল। মাইল কুঁড়ি দূরের পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যায় এক গ্রামে, যেখানে রয়েছে হাইস্কুল। তাকে দেখে মায়া হয় একজনের। আশ্রয় দেয় লজিং হিসেবে। থাকা, খাওয়ার বিনিময়ে পড়াতে হবে ওই বাড়ির ছেলেমেয়েকে। থাকা,খাওয়ার বন্দোবস্ত হলো বটে কিন্তু খাতা, কলম আর স্কুলের মাইনে কোথায় পাবে ভাবছিল সে। গৃহ কর্তাকে শ্রমিকের সাথে কাজের কথা বলতে দেখে এগিয়ে যায় রাখাল। বলে, একজন শ্রমিক কম নিতে। সে যে কাজ করতে চায় তা আর বুঝতে বাকি রইলো গৃহ কর্তার। সায় দেয় তার কথায়।

এভাবেই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করে রাখাল। উত্তীর্ণ হয় বিএসসিতেও। হলেন হাইস্কুলের শিক্ষক। গণিতে ভাল হওয়ায় একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে কুড়িয়েছেন সুনাম। ইচ্ছা শক্তির কাছে কোনো বাধাই যে বাধা নয়, সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছিল রাখাল।
লেখক: এম এ মাসুদ / সাংবাদিক ও কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন