ঢাকাবুধবার , ৩১ মে ২০২৩
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

লোহাখুচি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাস ছিটাচ্ছেন, সভাপতি টাকা মিটাচ্ছেন!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
মে ৩১, ২০২৩ ৮:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আসাদুল ইসলাম সবুজ ॥ লালমনিরহাটের লোহাখুচি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন দুদু ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম খন্দকারের বিরুদ্ধে গোপনে ৬ জন শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে নিয়োগ বাণিজ্যর টাকায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির জুয়াবাজি ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফলে অবৈধ ম্যানেজিং কমিটি বাতিল, গোপন নিয়োগ স্থগিত চেয়ে স্থানীয় অভিভাবকরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্কুল পরিদর্শক, পরিচালক, জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার ও মাধ্যমিক উপজেলা শিক্ষা অফিসার, লালমনিরহাট বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন দুদু জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য ও সভাপতি আবুল কাশেম খন্দকার হারাটী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন।

অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ফড়িং এর দিঘী বাজারের পাশে লোহাখুচি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়টি অবস্থিত। ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হিসেবে রুহুল আমিন দুদু যোগদান করেন। ২০১৪ সাল থেকে রুহুল আমিন দুদু প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ভাবে চলতি ২০২৩ সাল পর্যন্ত পকেট ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে আবুল কাশেম খন্দকার দায়িত্ব পালন করছেন।

একটি সূত্র জানান, সংশোধিত নতুন প্রবিধানমালায় টানা দুইবারের বেশি সভাপতি পদে থাকার সুযোগ থাকবে না। দুইবার সভাপতি হওয়ার পর একবার বিরতি দিতে হবে। পরে আবার তিনি সভাপতি হতে পারবেন। এমন বিধান রেখে চূড়ান্ত করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০২৩। এছাড়া বিদ্যমান ম্যানেজিং কমিটিতে সভাপতি হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা কী হবে নির্ধারণ করা নেই। ফলে দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে স্বশিক্ষিতরাও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গিয়ে অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষকরা বিড়ম্বনার শিকার হন। এ কারণে প্রস্তাবিত প্রবিধানমালায় সভাপতির জন্য সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাশ নির্ধারণ করেন।

তবে এসব নীতিমালা মানা হয়নি লোহাখুচি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ওইসব নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে বার বার পকেট কমিটি গঠনের মাধ্যমে লোহাখুচি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬টি পদে শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগের জন্য গত ২৩-০২-২০২৩ ইং তারিখে জাতীয় দৈনিক ভোরের ডাক ও স্থানীয় দাবানল পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যালয়ের শুন্য পদে সহ: প্রধান শিক্ষক ১ জন, পরিচ্ছন্ন কর্মী ১ জন এবং সৃষ্ট পদে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ১ জন, অফিস সহায়ক ১ জন, নিরাপত্তা কর্মী ১ জন ও আয়া ১ জন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ নিয়োগ বিজ্ঞাপনের খবর এলাকায় কোন মানুষ জানেন না। কারণ ওইদিন লালমনিরহাটের কোন ভোরের ডাক ও দাবানল পত্রিকা আসেনি। শুধুমাত্র ১০ কপি পত্রিকা এনে যাদের নিয়োগ দেয়া হবে শুধুমাত্র তাদের দেয়া হয়েছে আবেদন করার জন্য। কিন্তু ৬টি নিয়োগের বিপরীদে নিজেস্ব লোক দারা ছাফটিং আবেদনও করা হয়েছে।

এসব প্রার্থীর মধ্যেই সহ: প্রধান শিক্ষক হিসেবে-মোঃ লাভলু সরকার, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর -মোঃ শাকিল আহমেদ, অফিস সহায়ক -মোঃ রমজান আলী, নিরাপত্তা কর্মী- মোঃ আতিকুল খন্দকার, আয়া পদে- মোছাঃ রহিমা খাতুন, পরিচ্ছন্ন কর্মী/ঝাড়–দার (সুইপার) মিলন রায়-কে নিয়োগ দেয়ার জন্য চুড়ান্ত করে ৮ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। নিয়োগ বাণিজ্যর টাকায়, নিয়োগ না দিয়েই বিদ্যালয়ের কক্ষে দরজা বন্ধ করে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির জুয়াবাজি ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্যালয় কক্ষে জুয়ার আসরে বাহিরাগত লোকজনও অংশগ্রহন করছেন। এতে প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন দুদু তাস ছিটাচ্ছে আর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম নিজেই টাকা আদান প্রদান করছেন জুয়ার বোর্ডে। এছাড়াও অভিভাবকদের স্বাক্ষর জাল ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে প্রধান শিক্ষক গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে বোর্ডে জমা দেন। এ কারনেই গোপন নিয়োগ স্থগিত, অবিলম্বে অবৈধ ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠন, প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি বিদ্যালয় কক্ষে অবৈধ জুয়া খেলায় শিক্ষা প্রতিষ্টানের সুনাম ক্ষুন্ন করায় শাস্তির দাবী করেন।

উক্ত বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য আখতারুল ইসলাম জানান, কখন কিভাবে ভোট হল, কমিটি গঠন হল, কিছুই জানেন না তারা। অভিভাবকদের স্বাক্ষর জাল ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে প্রধান শিক্ষক গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে বোর্ডে জমা দেন। শুধু তাই নয় এখন দুর্নীতি করে লোক নিয়োগ দিচ্ছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এ কারনেই পকেট কমিটি বাতিল ও গোপন নিয়োগ স্থগিতের দাবী জানান।

বিভিন্ন পদে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের কথা অস্বীকার করে লোহাখুচি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়রের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন দুদু বলেন, আমি কোন দিনও তাস বা জুয়া খেলিনি। বিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ের জেরে কে বা কারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে জুয়া খেলায় ছবি বসিয়ে দিয়েছেন।

লোহাখুচি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও হারাটী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম খন্দকার বলেন, এটি স্কুল নয়, আমরা ফড়িং এর দিঘী বাজারে দলীয় অফিসে সময় কাটাতে দলীয় ছেলেরা মিলে মাঝেমধ্যে খেলি। তবে টাকা দিয়ে নয়। কেউ শিক্ষা প্রতিষ্টান নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন।

লালমনিরহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লিপিকা দত্ত বলেন, লোহাখুচি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়রে বিভিন্ন পদে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ আপাত্ত: স্থগিত করা হয়েছে। বিভিন্ন বিষয় অভিযোগগুলো তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিদ্যালয় কক্ষে জুয়া খেলার খবর শুনে অবাক হয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারি বলেন, জেলা প্রশাসক সহ আমাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে অনিয়ম প্রমান করা মুশকিল। তবে নিয়োগের বিষয় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন। আর আমাকে জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিলে আমি তদন্ত করবো এবং জুয়া খেলার প্রমান পাওয়া গেলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন