ঢাকাবুধবার , ৮ ডিসেম্বর ২০২১
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সংবাদ প্রকাশের জেরে গনমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
ডিসেম্বর ৮, ২০২১ ৮:০৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে সেই রিকশাচালক ছকুকে রাতভর নির্যাতনের পর হত্যা মামলার আসামিরা সংবাদ প্রকাশের জেরে নিউজবাংলার গাইবান্ধা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সহ-সাধারণ সম্পাদক পিয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।

সেই মামলায় ছকু হত্যার বাদী ও সাক্ষীকেও আসামি করা হয়েছে।বুধবার বিকেলে গাইবান্ধা নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বিচারক আবদুর রহমান মামলাটি গ্রহণ করেন। একই সাথে আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, চলতি বছরের ১৫ মে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের মন্টু মিয়ার মেয়ে মনিকা আকতারকে (১৪) ছকু হত্যা মামলার বাদি মোজাম্মেল হক, সাংবাদিক পিয়ারুল ইসলাম, তার ছোট ভাই ওয়ারেস সরকার, চাচা আসাদুল ইসলাম, ছকু হত্যার পর আন্দোলনে অংশ নেয়া একরামুল হক ও তার ছোট ভাই ইউসুপ আলী বাড়ির অদূরে একটি ব্রিজের সামন থেকে অপহরণ করে। পরে মোজাম্মেল মেয়েটিকে ঢাকার গাজীপুরে নিয়ে আটকে একাধিকবার ধর্ষণ করে।
অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে মেয়েটির মা রিপা বেগম বাদী হয়ে গত ২৩ জুন রিকশাচালক ছকু মিয়া হত্যা মামলার বাদি, সাক্ষী ও সাংবাদিকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে মামলার আবেদন করেন। গত ২৮ জুলাই মামলার আবেদনটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। পরে ৪ নভেম্বর তদন্ত শেষে দুই জনের বাদ দিয়ে চারজনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয় গাইবান্ধা পিবিআই এর তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই দিপংকর সরকার।

প্রতিবেদনে মোজাম্মেল হককে অপহরণ ও ধর্ষণে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে অপহরণের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। মামলায় যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা হলেন, পিয়ারুল ইসলামের ছোট ভাই ওয়ারেস সরকার ও একরামুল হকের ছোট ভাই ইউসুপ আলী। তবে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। এছাড়া ছকু হত্যা মামলার ৯ আসামিই হয়েছেন ধর্ষণ ও অপহরণ মামলাটির সাক্ষী হিসেবে। বাকিরাও একই পরিবারের সদস্য।

ছকু হত্যা মামলার এজাহারে বলা হয়, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের ছয় ভাই আলমগীর, আংগুর, রনজু, মনজু, সনজু ও মন্টু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় দাদনের কারবারে জড়িত। সুদের টাকায় তারা অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছেন।
তাদের সঙ্গে একই গ্রামের রিকশাচালক ছকু মিয়ার পারিবারিক ও দাদনের টাকা নিয়ে বিরোধ ছিল। ছকুর ছেলের সঙ্গে মন্টু মিয়ার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে সেই বিরোধ আরও বাড়ে। এ নিয়ে গত ১৫ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছকু মিয়াকে তারই বাড়িতে আটকে হাত-পা বেঁধে ফেলে ছয় ভাইসহ তাদের লোকজন। রাতভর ছকুর ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন। এ সময় তার এক হাত ও একটি দাঁত ভেঙে যায়। এ ছাড়া তার গোপনাঙ্গে আঘাত করা হয়। পরদিন ১৬ মে সকাল থেকেই ছকু মিয়ার বাড়িতে তাকে জিম্মি করে রাখা হয়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নিতে চাইলে ছকুর দুই ভাই মহাব্বর ও জহিরকে মারপিট করা হয়। পরে গ্রামবাসিরাও তাকে হাসপাতালে নিতে পারেনি। ওই দিন দুপুরে স্থানীয় এক সংবাদকর্মী পিয়ারুল ইসলাম ঘটনাটি জানার পর ৯৯৯ এ ফোন করলে বিকেল ৫টার দিকে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ছকুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তিনদিন চিকিৎসা করার পর আসামিদের ভয়ে পালিয়ে বোনের বাড়িয়ে আশ্রয় নেয় ছকু।

এক সপ্তাহ পর ছকুকে সেখান থেকে ধরে এনে দামোদরপুর ইউপি চেয়ারম্যান এ জেড,এম সাজেদুল ইসলাম স্বাধীনের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে ‘ছেলের প্রেমের খেসারত’ হিসেবে ছকু মিয়াকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই টাকার জন্য ছকুর একমাত্র ঘরটিও ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন দাদন কারবারিরা। এরপর তাকে ভিটেছাড়া করা হয়। পরে ছকু মিয়া আশ্রয় নেন গাজীপুরের শ্রীপুরে ছেলের বাসার। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ জুন মৃত্যু হয় তার। গ্রামবাসি ও নিহত ছকু মিয়ার পরিবার জানায়, ছকুর মৃত্যুর পর ছেলে মোজ্জাম্মেল ও মেয়ে ছোমেলা খাতুন মরদেহ নিয়ে সাদুল্লাপুর আসেন ওই রাতেই। রাতভর মোজাম্মেলসহ তার পরিবার সাদুল্লাপুর থানায় মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি। পরে আসামিরা স্থানীয় চেয়ারম্যান এজেএম সাজেদুল ইসলাম স্বাধীনের মাধ্যমে মিমাংসার প্রস্তাবের আশ্বাস দিয়ে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যায়। পরদিন ৪ জুন ছকুর ছেলে মোজ্জাম্মেল ও তার ছোট বোন ছমেলা খাতুনকে ঘরবন্দি করে চেয়ারম্যানের উপস্থিতে তারা মরদেহ দাফন করে।

দাফনে মোজাম্মেলসহ পরিবারের কাউকেই অংশ নিতে দেয়া হয়নি। দাফন শেষে ওই দিনই মোজাম্মেল ও তার বোনকে গ্রাম ছাড়া করে দাদন কারবারিরা। পরে ছমেলা পার্শবর্তী শ্রীকলা গ্রামের মামা মুসা মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এ ছাড়া মোজাম্মেল যান আত্মগোপনে।

কয়েকদিন পর মোজাম্মেল পার্শবর্তী উত্তর মরুয়াদহ গ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাকের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে সেই বাড়িতে গ্রামবাসির সহযোগিতায় খেয়ে না খেয়ে বসবাস করছেন তিনি। পরবর্তীতে এ ঘটনায় থানায় মামলা না নিলে গত ১৬ জুন ছকু মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হক জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে (সাদুল্লাপুর) মামলা করেন। পরে আদালতের বিচারক শবনম মুস্তারী সাদুল্লাপুর থানাকে মামলা রেকর্ডভুক্ত করে ২৩ জুনের মধ্যে মরদেহ উত্তোলনসহ প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। মামলার পর মোজাম্মেলকে সেখানেও বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আসছে আসামিরা।

এসব ঘটনায় মামলা ছাড়াও নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি ও আদালতে একটি মামলাও (৭ ধারা) করেন তিনি। যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।গত ২১ জুন সাদুল্লাপুর থানার পুলিশ ও জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লোকমান হোসেনের উপস্থিতে মরদেহ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। তবে ময়না তদন্তের ফরেনসিক রিপোর্ট এখনো আদালতে আসেনি।

এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটি জেলাজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। পরে গ্রামবাসি, ইউনিয়ন ও উপজেলাবাসির ব্যানারে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে আসামিরা দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকেন। গত ২৬ অক্টোবর নিম্ন আদালতে আসামি মন্টু মিয়া ও রনজু মিয়ার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তারাসহ সব আসামিরা জামিন পায়।

মরুয়াদহ গ্রামের আবদুর রাজ্জাক জানান, মূলত হত্যা মামলা ধামাচাপা ও বাদি-সাক্ষীসহ সংবাদকর্মীকে হয়রানি করতেই এ মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা একপেশি তদন্ত করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন দিয়েছেন।
গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে পিবিআই আসামি ছয়জনকে তলব করে। পরে আসামিরা আরও কয়েকজন গ্রামবাসিসহ তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দিপংকর সরকারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। পরে ঘটনার বিস্তারিত শুনে দিপংকর আবদুর রাজ্জাকের কাছে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু রাজ্জাক টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সেখান থেকে সবাইকে নিয়ে চলে যান।

এরপর দিপংকর বাদিপক্ষের সাজানো সাক্ষীদের কথা মতো নাটকীয় ঘটনা বানিয়ে এ প্রতিবেদন দেয়। এরমধ্যে আসামিপক্ষ কিংবা গ্রামবাসির কোন মতামত নেয়া হয়নি।
এ নিয়ে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ওই পুলিশ (তদন্তকারী কর্মকর্তা) মন্টু (টাকা) চাইছিল পনের হাজার। হামরা কিসক মন্টু দিমো। হামার তো অপরাধ নাই।’
সেই তেকনে (ঘুষ না দেয়া) ওমার ঠাই (বাদিপক্ষ) টেকা খায়া এগলে করছে পুলিশ। এটা কোন বিচার হল- বলেন আবদুর রাজ্জাক।

সেই দিন একই গ্রামের ভ্যানচালক মধু মিয়াও যান পিবিআই অফিসে। তিনি বলেন, ‘একে একে সব শুনছে। আসার আগে হাত দিয়ে টেকার ইশারা করে পুলিশ। হামরা কছি সত্যের পথে ফাঁসি হোক। টেকা দিবের পাব না।’
এদিকে, অক্টোবর মাসে ভিকটিম মন্টুর মেয়ে মোজাম্মেলের খোঁজে উত্তর মরুয়াদহ আবদুর রাজ্জাকের বাড়িতে যায়। সেখানে মোজাম্মেলকে না পেয়ে প্রতিবেশি রতন মিয়ার বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেয় মেয়েটি।
প্রায় ঘণ্টা খানেক গ্রামবাসিরা তাকে বিভিন্ন জেরা করেন। সেখানে মেয়েটি বলে, ‘দুই তিন বছর ধরে মোজাম্মেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক আমার। আমাক কেউ অপহরণ, ধর্ষণ করে নাই। বাপ, চাচা জ্যাঠ প্রতিদিন মারধর করে। মোজাম্মেলকে মারার হুমকি দেয়। আমি তো নিরুপায়। পরে সেদিন গাইবান্ধাত (আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি) মিথ্যা বলছি।’ মনিকা বলে, ‘আরেকদিন যদি ওটি যাই (আদালতে) তাহলে সব সত্যি কথা বলবো।’
সেদিন গ্রামবাসির কাছে মেয়েটি দাবি করে বলেন, ‘আমাকে মোজাম্মেলের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেও। পরে আমার বাবা-চাচার কাছে ১০-১২ লাখ টাকা আর দুই বিঘা জমি নিয়ে দেন। আমরা অন্য ঠাই (জায়গা) যায়া বিয়ে করে সংসার করবো।’ সেদিন এ ঘটনার সাক্ষী বাড়ির মালিক রতন মিয়া বলেন, ‘হুট করি রাত ১০টার দিকে মনিকা আসলো। আগে কোনদিন সে আসেনি। পরে মোজাম্মেলকে খুঁজে চায়। আমরা পরে গ্রামের লোকজন তাকে বুঝিয়ে তার বাড়িতে দিয়ে আসি।’

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে আসামিপক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমার মক্কেল মোজাম্মেল একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার বাদি। এছাড়া আরেকজন মামলাটির সাক্ষী। আর সাংবাদিক পিয়ারুল নির্যাতিত ছকুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ ঘটনাটি ফলাও করে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন করে। যা দেখে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনাটি জেলাজুড়ে আলোচনায় আসে।’

মূলত আমার মক্কেলদের হয়রানি ও হত্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে আসামিরা মামলাটি করেছে। এটা একটা ভিত্তিহীন মামলা বলেন জাহাঙ্গীর হোসেন।
জিহাদ হক্কানী/গাইবান্ধা

আপনার মন্তব্য লিখুন