আশরাফুল হক, লালমিনরহাট।। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার মহাসড়কের পাশে আলাউদ্দিননগর মমিনপুর এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা উদ্ধারকৃত নিহত সেই তরুনীর পরিচয় ৫ মাস পর মিলেছে। প্রেম ঘটিত কারনে পূর্ব পরিকল্পনায় ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলা থেকে সুকৌশলে তরুনীকে ডেকে এনে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সোমবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় লালমনিরহাটের বি-সার্কেল এএসপি তাপস সরকার পাটগ্রাম থানায় সাংবাদিকদের এসব ঘটনার বর্ণনা প্রদান করেন। হত্যার মোটিভসহ পুরো কাহিনী উদ্ধারসহ প্রায় ৫ মাস পর ধর্ষক ট্রাক চালক মোঃ জিরাব আলী (২৮) ও আপন ভাতিজা শাহিনুর ইসলাম শাহিন (১৫) কে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারুকৃত ট্রাক চালক জিরাব আলী (২৮) শেরপুর জেলার শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের কুবেদ আলী ছেলে। ভাতিজা শাহিনুর ইসলাম শাহিন (১৫) শেরপুর জেলার শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের জিলামুদ্দিন ছেলে।
লালমনিরহাট জেল হাজতে ট্রাক চালক মোঃ জিরাব আলী (২৮) এবং ভাতিজা শাহিনুর ইসলাম শাহিন (১৫) কে পাঠানো হয়েছে যশোর শিশুশোধনাগারে। হত্যার কাজে ব্যবহারকৃত ট্রাকটিও জব্দ করে ত্রিশাল থেকে লালমনিরহাটে আনার কথা জানান পুলিশ।
নিহত হামিদা আক্তার (২৪) (স্বামী পরিত্যক্তা নিঃসন্তান) ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ভরডোবা গ্রামের রফিকুল ইসলাম মেয়ে। জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ট্রাক চালক জিরাব আলী (২৮) এর প্রেমে পড়েন একই এলাকার এক তরুনী। নিজ এলাকায় সেই তরুণীর নাম হামিদা আক্তার এবং কোথাও সুরমা আবার কোথাও নন্দিনী নামে পরিচিত ছিল। আগের দুই স্ত্রী ও একাধিক সন্তান থাকায় নারী লোভী ট্রাক চালক সুন্দরী হামিদাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। তবুও তরুনীর চাপ বিয়ে করতেই হবে। বিয়ের চাপ সামলাতে না পেরে প্রেমিকা হামিদাকে অন্য কোথাও নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন চরিত্রহীন প্রেমিক সেই ট্রাক চালক জিরাব আলী।
গত বছর (১ ডিসেম্বর) ত্রিশাল থেকে রংপুরে আসতে বলা হয় সেই তরুনীকে। ট্রাক চালক ও তার ভাতিজা ট্রাক ভাড়ার উসিলায় আগের দিন আসেন রংপুরে। তার আগে কুটকৌশল অনুযায়ী ১৫ দিন আগে থেকে তরুনীকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করেন প্রেমিক ট্রাক চালক। অন্য একজনের ফোন দিয়ে তরুনীর সাথে যোগাযোগ চলত নিয়মিত। পর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিয়ের কথা বলে রংপুরে আসতে বলা হয় তরুনীকে। ওইদিন বিকেলে রংপুরের দেয়া ঠিকানায় চলে আসেন সেই তরুনী। এরপর খাওয়া দাওয়া করে ট্রাকে উঠে বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন ট্রাক চালক, ট্রাক চালকের ভাতিজা ও তরুনী হামিদা। পথিমধ্যে বড়খাতা বাউরা বাজারের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরির পর চাচা-ভাতিজা কোন এক সময় গণধর্ষণ করেন তরুনীকে। তরুনীকে ফাঁদে ফেলে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হবে তা বিশ্বাস ছিল না তরুনীর। তর্ক বিতর্ক বাক-বিতন্ডা করার এক পর্যায়ে ট্রাকে থাকা রড দিয়ে তরুনীর মাথায় সজোরে আঘাত করেন ট্রাক চালক। ট্রাকের উপরে তরুনীর মৃত্যু নিশ্চিত হলে পরে বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে লাশ ফেলে পালিয়ে যান ধর্ষক ও হত্যাকারী আপন চাচা-ভাতিজা। এরপর পাটগ্রাম থানার জোংড়া ইউনিয়নের মমিনপুর আলাউদ্দিননগর নির্জন এলাকায় মহাসড়কের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এক তরুণীর লাশ দেখে (২ ডিসেম্বর) সকালে পুলিশকে খবর দেন জনগণ। উদ্ধারকৃত রক্তাক্ত বিবস্ত্র লাশের পোস্ট মর্টেম শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করেন আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। সেই দিন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন পুলিশ। ২ ডিসেম্বর দায়েরকৃত সেই ক্লুলেস মামলার মোটিভ উদ্ধারে প্রযুক্তি ব্যবহারের পর প্রথমে বাউরা জমগ্রাম থেকে একজন লোক জানান, এক মেয়ে ও দু’জন পুরুষ লোককে বাউরা বাজারে ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে এমন ক্লু পায় পুলিশ। এরপর আদিতমারী থেকে আরও একজনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তিনদিন আগে গত ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পাটগ্রাম থানা পুলিশ বিশেষ টিম বিবস্ত্র সেই তরুনীর করুন মৃত্যুর কাহিনী উদ্ধার করতে সক্ষম হোন পুলিশ। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর সময় তরুনীর গায়ে জামা, কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত বিবস্ত্র ও পায়ের নীচে পায়জামা ওড়না পড়ে থাকতে দেখা যায়। মাথায় আঘাতের কারনে মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ে মুখমণ্ডল রক্ত দিয়ে মাখা যায়। এছাড়া তরুনীর শরীরে অন্য কোথাও আঘাত ছিল না। তবে ধর্ষণের আলামত হিসেবে তরুনীর পার্সোনাল পার্টসে দুইজনের সিমেন্ট পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মহন্ত বলেন, প্রায় ৫ মাস ধরে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাক চালক ও তার আপন ভাতিজাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।