ঢাকাবুধবার , ১০ মার্চ ২০২১
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ সিনেমাকেও হার মানালেন দুই সিপাই!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
মার্চ ১০, ২০২১ ৪:৩৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট।। ভাই যদি পারেন আমার বিষয়টি নিয়ে এসি (সহকারী কমিশনার) স্যারকে বলেন, আমার বাসা দিনাজপুর এখানে আমার পোষ্টিং ,আপনাদের কারনে আমার বদলিটা হলে আমি আপনাদের মিষ্টি খাওয়াবো। একটু ভালোভাবে বিষয়টি তাকে জানান এবং এমনভাবে বিষয়টি আপনাদের পত্রিকায় ফুটায় তুলেন যাতে আমার পোষ্টিংটা (বদলি) হয়ে যায়, প্রতিবেদকের কাছে এমটিই বলেছেন লালমনিরহাট কাস্টমস,এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগে কর্মরত সিপাই রনি বাবু। শনিবার( ১ মার্চ) রাত ১১ টায় শহরের মিশনমোর এলাকায় অবস্থিত এস আর পার্সেলের সামনে একটি পিকআপ ও দুটি অটো ভর্তি কয়েলের কার্টুন আটক করে লালমনিরহাট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগে কর্মরত সিপাই রনি বাবু ও ধীমান চন্দ্র রায়। অভিযোগ ছিলো এস আর পার্সেলে কন্ডিশনের মাধ্যমে সরকারী ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে এই কয়েলগুলো লালমনিরহাটে এসেছে।

সেই কয়েলগুলো আটক করে সাড়ে সাত হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করে এবং বাকি টাকা বিকাশে পাঠানোর শর্তে তাদের কয়েলগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি প্রতিবেদকের কাছে ঘুষ গ্রহনের সেই ঘটনার বিশ মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজ চলে আসে। পুরো ঘটনার আলোচনায় রনি টাকা পয়সার রফাদফা করেছেন যা সেই ভিডিও
ফুটেজের কথাবার্তায় স্পষ্ট হয়েছে। অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঘটনার স্বিকার ভুক্তভোগীর সাথে একাধিকবার কথা হয় প্রতিবেদকের। পুরো ঘটনাটি স্বীকার করেছেন সেই ভুক্তভোগী। শনিবার রাত ১১ টা সকল দোকানপাট বন্ধ করছেন ব্যাবসায়ীরা। সেই সময় এস আর পার্সেলের সামনে হাজির কাষ্টমস অফিসের সিপাই রনি বাবু ও ধীমান চন্দ্র রায়। কয়েলভর্তি গড়িতে থাকা কয়েলের মালিককে বললেন আমরা কাস্টমসের লোক এই পরিচয় দিয়েই কাগজপত্র দেখতে চান রনি বাবু ও ধীমান চন্দ্র রায়। কাগজ দেখাতে না পারায় ওই কয়েলের মালিককে পার্শবর্তী কৃষান সেলুনের সামনে অন্ধকারে ডেকে নিয়ে গেলেন রনি বাবু।

আর ধীমানের দ্বায়িত্ব কয়েল ভর্তি গাড়ি পাহাড়া দেয়ার। রনি বাবু রফাদফা করছেন কয়েলের মালিকের সাথে। কয়েলের দুজন মালিকের মধ্যে একজন বলেন, স্যার আমাদের কাছে টাকা নেই আমি টাকা নিয়ে আসতেছি আপনি আপাতত মালগুলো ছেড়ে দিতে পারেন। এরই মধ্যে দুই অটোর মালিক আসলেন রনি বাবুর কাছে, সবিনয়ে বললেন স্যার আপাতত অটোদুটো ছেড়ে দেন আমাদের বাসা দূরে, মালগুলো নামিয়ে দিয়ে অটো চার্জে দিতে হবে। তখন রনি বললেন ঠিকআছে তোমরা চলে যাও তবে নাছোড়বান্দা রনি অটো চালকের মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা নিলেন এবং মুঠোফোনে বললেন, ধীমান অটোদুটো ছেড়ে দাও, অটোগুলো যাক। তারপর বিভিন্ন কথা বলে সময় ক্ষেপন করে টাকার জন্য অপেক্ষা করছেন রনি বাবু।

তারপর বলতে থাকলেন কিভাবে পেয়েছেন সেই ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া কয়েলের খোঁজ। রনি বাবু বলেন, আমরা দুদিন আগেই এই কয়েলের খোঁজ পেয়েছি আমাদের সোর্সের মাধ্যমে। মালগুলো আমরা দুদিন আগেই নিয়ে যেতাম কিন্তু এস আর পার্সেলের মালিক আমিনুর ভাই বলছে ভাই এটা কন্ডিশনের মাল। তাই আমরা নেইনি। কারন আমরা চাইনি তার ক্ষতি হোক। এই মালগুলো এর আগেও কয়েকবার এসেছে কোনো কাগজপত্র নেই। রাতে করেই মালগুলো কুরিয়ার সার্ভিস থেকে উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় তিনি সেখানে উপস্থিত থাকা একজনকে বলছেন, আপনি আমার নম্বরটা রাখেন। কয়েল ,গুল, বিড়ির কোনো ইনফরমেশন থাকলে আমাকে জানাবেন। ইনফরমারের জন্য আমাদের আলাদা একটা বরাদ্দ থাকে। আমরা চাই না যে ব্যাবসায়ীর ক্ষতি হোক,আমরা কিছু নিয়ে ছেড়ে দেই। যদি ধরে নিয়ে যাই তখন এসি স্যার (সহকারী কমিশনার)
একটা বিঁচার আদেশ করে। মিনিমাম ৫০ হাজারের নিছে কোনো বিঁচার আদেশ দেন না তিনি। তিনি আরও বলেন, ভাই আমরা উত্তর বঙ্গের লোক তো তাই সোর্সকে বেশি টাকা নিতে পারি না। আমার অনেক ব্যাচমেট আছে যারা এই জিনিস (কয়েলগুলো) পেলে ৫০হাজার টাকার নিচে ছাড়তো না।

এর মাঝেই টাকা আনতে যাওয়া কয়েলের আরেক মালিক জিয়া চলে এসেছেন। রনি বাবুর হাতে সাড়ে সাত হাজার টাকা দিতে ধরলে তখন তিনি বলেন, না এটা নিবো না, যেটা কথা হয়েছে সেটাই দিতে হবে। পয়ত্রিশ হাজার টাকার নিছে নিবো না। এতক্ষন দাড় করাই রেখে এটা কি করলেন। তখন জিয়া বললেন ,স্যার আমি দশ হাজার টাকা ম্যানেজ করার জন্য খুব চেষ্ঠা
করলাম। এখন থেকে মাল আনলে আপনাকে টাকা দিয়েই নিয়ে যাবো। তারপরও টাকা
নিতে নারাজ রনি বাবু।

রনি বাবু বলেন, তবে আপনাকে একটা সুযোগ দিলাম, পরবর্তীতে আপনাকে বাকি টাকা বিকাশ করে দিতে হবে। এই শর্তেই কয়েলগুলো ছেড়ে দিলেন লালমনিরহাট কাস্টমস,এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগে কর্মরত সিপাই রনি বাবু ও ধীমান চন্দ্র রায়। কাস্টমস অফিসের সিপাই ধীমান চন্দ্রের সাথে কথা বলতে লালমনিরহাট কাস্টমস,এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিসে গেলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই সটকে যান তিনি । এরপর কথা হয় ওই কার্যালয়ের রাজস্ব কর্মকর্তা আকরাম হোসেনের সাথে। তিনি অফিসিয়ালি তাদের দুজনের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান। তবে প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন। এরপর একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকে দিয়ে সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য প্রবাহিত করা হয়।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের সহকারী কমিশনার মোঃ আব্দুল হান্নান (অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব) বলেন, বিষয়টি আমি আমার অফিসের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জেনেছি। এ বিষয়ে খুব দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন