ঢাকারবিবার , ৮ নভেম্বর ২০২০
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মৃত জুয়েলের পরিবারকে সহায়তা করলো ডিসি : ৩ আসামীর স্বীকারোক্তি!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
নভেম্বর ৮, ২০২০ ৭:২৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে কোরআন শরীফ অবমাননার গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে হত্যা শহিদুন্নবী জুয়েলের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন। রোববার (৮ নভেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নিহত জুয়েলের মেয়ে জেবা তাসনিয়ার হাতে ২০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিহতের বড় ভাই কারমাইকেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু ইউসুফ মোঃ তৌহিদুন্নবী।

এদিকে এ ঘটনায় ৩মামলার আরো ৪জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এনিয়ে ২৯জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া শনিবার (৭নভেম্বর) মসজিদের খাদেমসহ ২আসামী ৩দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় তারা আমলি আদালত ৩-এর বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফেরদৌসী বেগমের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক এ জবানবন্দি দেন। এছাড়া রিমান্ড ছাড়াই জবানবন্দি দিয়েছেন আব্দুল গণি নামে আরো এক আসামী। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খাদেমসহ ৪ জনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন লালমনিরহাট আমলি আদালত-৩ এর বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফেরদৌসী বেগম।

দোষ স্বীকার করে যারা জবানবন্দি দিয়েছেন তারা হলেন- বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খাদেম পাটগ্রাম ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রামের জোবেদ আলী (৬১), বুড়িমারী ইউনিয়নের কামারেরহাট এলাকার জাহেদুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান রাজু (১৯) ও একই এলাকার আব্দুল গণি (৪৫)।

এদিকে শনিবার (৭ নভেম্বর) সকালে আলোচিত ওই ৩ মামলার প্রধান আসামি আবুল হোসেন ওরফে হোসেন ডেকোরেটরকে ঢাকায় গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ। রোববার (৮ নভেম্বর) আরো ৪ আসামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ নিয়ে ওই ৩ মামলায় মোট ২৯ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানান, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৯জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গত শনিবার দ্বিতীয় দফায় ৩দিনের রিমান্ড শেষে ৪ জনকে আদালতে পাঠানো হয়। যার মধ্যে খাদেমসহ ২ জন দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে রিমান্ড ছাড়াই একজন দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আর প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ৯আসামির রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে শহিদুন্নবী জুয়েলকে হত্যার অভিযোগে নিহতের চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ৩১ অক্টোবর একটি মামলা করেন। একই ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পাটগ্রাম থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী বাদী হয়ে এবং ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুরের অভিযোগে অপর একটি মামলা করেন বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত। বহুল আলোচিত ওই ৩ মামলা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত ২৯ অক্টোবর বিকেলে সুলতান রুবায়াত সুমন নামে একজনকে সঙ্গে নিয়ে বুড়িমারী বেড়াতে আসেন রংপুরের শহিদুন্নবী জুয়েল। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরিফ নামাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে পড়ে যায়। এ সময় কোরআর ও হাদিসের বই তুলে চুম্বন করে যথাস্থানে রেখে দেন জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান রুবায়াত সুমনকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে যান।

সন্ধ্যায় পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে দুই থানার (পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা) পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মহন্তসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।

পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে নিহত জুয়েলের সঙ্গী সুলতান রুবায়াত সুমনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করলে ততক্ষণে উত্তেজিত জনতা শহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।

জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন