বাঁশের খুঁটির ওপর দাঁড় করানো কয়েকটি টিন। চারদিকও পুরাতন টিন দিয়েই ঘেরা। ঘরের ঠিক পেছন দিয়েই বয়ে চলেছে তিস্তা নদী। যিনি এই ঘরে বাস করছেন জমিটিও তার নয়। নড়বড়ে এ ঘরেই দীর্ঘ এক যুগ ধরে বাস করছেন বৃদ্ধা জামিরন বেওয়া (৭০)। হাড় কাঁপানো শীতে জরাজীর্ন অবস্থা তার।
১২ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে বর্তমানে তিস্তা পাড়ের এই ঝুপড়ি ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই তার। দুই ছেলে পাশাপাশি থাকলেও বৃদ্ধা মায়ের খবর রাখেন না তারা।
জামিরন বেওয়ার বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিংঙ্গীমারীর ধুবনী গ্রামে। তার স্বামী আব্দুর রশিদ মারা গেছেন এক যুগ আগে। দুই ছেলে দুই মেয়ে, সবারই বিয়ে হয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বয়সের ভারে লাঠিতে ভর করে হাঁটতে হয় তাকে। ঝুপড়ি ঘরের দুই হাত পিছন দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। এই বৃদ্ধা নিজেই রান্না করে খান। কয়েক দিন আগে পড়ে গিয়ে আঘাত পান। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়লে রান্নাও করতে পারছেন না। এ কারণে না খেয়েই দিন কাটছে এই বৃদ্ধার।
স্থানীয়রা বলছেন, জামিরন বেওয়ার সংসারে এক সময় ছিল পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু। চাষের জমি ছিল প্রায় ১৫ বিঘা। কিন্তু তিস্তার ভাঙন থেকে রক্ষা পায়নি কিছুই। সব হারিয়ে নিঃস্ব জামিরন বেওয়া এখন অন্যের জমিতে বাস করছেন। বয়সের ভারে কাজ করতে না পেরে অন্যের কাছে হাত পেতে যা পাচ্ছেন তা দিয়েই দিন কাটাচ্ছেন।
জামিরন বেওয়া জানান, কুয়াশা ও ঠাণ্ডায় অনেক কষ্টে থাকি। আমার ভাত-পানিরও কষ্ট। এই নদীর পাড়ে পড়ে আছি। আমার খুবই কষ্ট। রান্না করতে না পেরে অনেক সময় না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। মানুষের জমিতে পড়ে থাকা ধান কুড়াই। ওই ধান বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে কোন মতে চলি। ধান না থাকলে মানুষের কাছে হাত পেতে খাই। ছেলেরা দেখে না, খারাপ ব্যবহার করে। তাই ওদের কাছে আর যাই না।
তার প্রতিবেশী জামিনুর ইসলাম বলেন, ওই বৃদ্ধার খুবই কষ্ট। দুই ছেলে থেকেও তারা মাকে দেখে না। তিনি ১২ বছর ধরে অন্যর জমিতে এই টিনের ছাপড়া ঘরে থাকেন। অনেক বয়স হয়েছে, লাঠি নিয়ে চলাচল করেন। নিজেই রান্না করে খান। অনেক সময় না খেয়ে দিন পার করেন। আমরা প্রতিবেশী হিসেবে যেটুকু সাহায্য করা প্রয়োজন তা করি।
এ বিষয়ে সিংঙ্গীমারী ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু বলেন, ওই বৃদ্ধাকে গুচ্ছগ্রামে ঘর করে দিতে চেয়েছি কিন্তু তিনি সেখানে থাকবেন না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সকল প্রকার সাহায্য পাচ্ছেন। আমি নিজেও তাকে নদীর পাড় সরানোর চেষ্টা করেছি। তবে তিনি সরেন না।