ঢাকাশুক্রবার , ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সুন্দরগঞ্জে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ ৩:১৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাশেদুল ইসলাম রাশেদ,স্টাফ রিপোর্টারঃ স্বাধীনতার ৫১ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের সীচা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা (লাল মুক্তিবার্তা নং-০৩১৭০৩০১৩৭) অব্দুল গণী মিয়ার।

অভিযোগ রয়েছে, জালিয়াতি করে ওই এলাকার আব্দুল বাকি নামের একজন আব্দুল গণী সেজে ভোগ করছেন মুক্তিযোদ্ধার সকল সুযোগ সুবিধা। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে আব্দুল গণী মিয়ার পরিবার। অভিযোগের পর দফায় দফায় তদন্ত হলেও মিলছেনা সমাধান। এখন তার মৃত্যুর পরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিসহ সকল সুযোগ-সুবিধা পেতে লড়ে যাচ্ছেন তার স্বজনরা।
আরো পড়ুনঃ ঘুমন্ত স্বামীর শরীরে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দিলেন স্ত্রী!
স্বজনদের অভিযোগ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণী মিয়া ভারতের ত্রিপুরহাট ইয়ুথ ক্যাম্পে প্যারামেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করে ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নেয়াসহ চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি মারা যান ১৯৯৮ সালের ৫ই মে। তার মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধার গেজেটভুক্ত করার আশ্বাস দিয়ে সকল কাগজপত্র নেয় তৎকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান হামিদ। তিনি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণীর মিয়ার কাগজপত্র ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে আব্দুল বাকিকে (তার ভায়রা ভাই) আব্দুল গণী দেখিয়ে তাকে গেজেটভুক্ত করতে সহায়তা করেন। এমন জালিয়াতির এই ঘটনা ফাঁস হলে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তের দাবি জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন আব্দুল গণির ছেলে মঞ্জু মিয়া।

স্থানীয়দের জানান, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণীর বাবার নাম হেলাল উদ্দিন। আর আব্দুল বাকির বাবার নাম মেহার উদ্দিন। তারা হেলাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল গণী মিয়াকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ছিলেন বলে জানেন। আর আব্দুল বাকি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এমন তথ্য জানা নেই তাদের । ২০২১ সালে মারা যান আব্দুল গণি বনে যাওয়া আব্দুল বাকি।

মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক বলেন, ‘হেলালের ছেলে গণীসহ আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। তার ডাক্তারি অভিজ্ঞতা ছিল। যুদ্ধের পাশাপাশি তিনি ক্যাম্পে চিকিৎসা করতেন। এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ৬ নম্বর সেক্টরে এক সাথে ছিলাম। আমার পায়ে গুলি লেগেছিল। সে চিকিৎসাও করেছে আব্দুল গণী মিয়া।’ তবে ওই গণীকে (আব্দুল বাকি) আমি যুদ্ধ বা ট্রেনিং করতে দেখিনি। হঠাৎ শুনতেছি সেও বলে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পায়।’ মুক্তিযোদ্ধা মুনছুর আলী বলেন, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ওই হেলাল (বাবার নাম) গণী। এনার সাথে দেখা হয় ট্রেনিং সেন্টারে। আর আমি ওনাক (আব্দুল বাকি) দেখিও নাই; আর উনি মুক্তিযোদ্ধা নন।’

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, হেলাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল গণীই ছিলেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। অথচ তার পরিবর্তে জালিয়াতির মাধ্যমে আব্দুল গণী সেজে গেজেটভুক্তসহ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন মেহার উদ্দিনের ছেলে আব্দুল বাকি। জালিয়াতির এই ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান হামিদের যোগসাজসকে দায়ি করছেন তারা। তারা জানান, দেওয়ান হামিম ওই সময়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটিতে থাকার কারণে এটি তার জন্য সম্ভব হয়েছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে বাদ দিয়ে জালিয়াতি করে আব্দুল বাকিকে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেওয়ার সাথে জড়িত মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান হামিদসহ জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন স্থানীয় একাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন।

আব্দুল গণী মিয়ার ছেলে অভিযোগকারী মঞ্জু মিয়া বলেন, ‘আমার বাবাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দীর্ঘ ১৬ থেকে ১৭ বছর ধরে আমার বাবার নাম ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিচ্ছে বাকী । আর এই জালিয়াতি করছে দেওয়ান হামিদ। এসময় তিনি তার বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বপক্ষে বিভিন্ন সনদপত্র দেখান। তার বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিসহ জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।

অপরদিকে,আব্দুল গণী বনে যাওয়া আব্দুল বাকির বাড়িতে গেলে মুক্তিযুদ্ধের কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি তার পরিবার। এমনকি তার (বাকি) মুৃক্তিযুদ্ধের কোনও গল্প জানা নেই কারও। তবে, বাবার কোন মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলতে না পারলেও বাবা (আব্দুল বাকি) ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নন বলে দাবি করেন ছেলে লাল মিয়া। তিনি বলেন, “বাকি” আমার বাবার ডাক নাম।’ আপনার বাবা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ” এখন খেয়াল নেই বলে জানান লাল মিয়া “।

এদিকে জালিয়াতিতে অভিযুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান হামিদ অভিযোগের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে, জালিয়াতি করে আব্দুল বাকিকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ-আল-মারুফ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণী মিয়ার ছেলে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে তার বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিসহ বাবার স্থলে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে যাচাইসহ বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়। সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি সিদ্ধান্তে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের দুই পক্ষের শুনানি শেষে তাদের কাগজপত্র, স্বাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এবিষয়ে মন্ত্রণালয় চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

উল্লেখ্য যে, সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি সিদ্ধান্তে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের দুই পক্ষের শুনানি শেষে প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আঃ গনি, পিতা-হেলাল উদ্দিন। অপর পক্ষে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বাকী ওরফে আঃ গণি, পিতা-মেহের উদ্দিন এর পক্ষে উপস্থিত তিন সাক্ষীর মধ্যে একজন মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছেন মর্মে স্বীকার করে লিখিত দিয়েছেন। বাকী দুজনও আব্দুল গনি, মেহের উদ্দিনকে সরাসরি যুদ্ধ করতে দেখেন নি বলেও লিখিত দিয়েছেন। এতেই প্রমাণিত হয় বাকী ওরফে আঃ গনি, পিতা-মেহের উদ্দিন ভূূয়া মুক্তিযোদ্ধা।
রাশেদুল ইসলাম রাশেদ/আরইসআর

আপনার মন্তব্য লিখুন