ঢাকারবিবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস: বিদেশি উৎসবে স্বদেশী ইতিহাসের মৃত্যু!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১ ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

অধ্যক্ষ আসাদুল ইসলাম।। স্বৈরাচারের বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতি। আন্দোলন সংগ্রামে উত্তপ্ত ঢাকা। পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত রাজপথ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বৈরাচারের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল। ফলে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের জন্ম। কালের প্রবাহে ভালবাসা দিবসের যাত্রা। অবশেষে বাঙ্গালীর সংগ্রামী এক ইতিহাসের অকাল মৃত্যু!

১৯৮৩ সারের ১৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গালীর এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস। সেদিন স্বৈরশাসকের বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিল হাজারো সংগ্রামী শিক্ষার্থী। প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণ। স্বৈরাচার পুলিশ বাহিনী দ্বারা সেদিন শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে নিক্ষেপ করা হয়েছিল টিয়ার গ্যাস, জলকামান ও গুলি।

ফলে নিহত হয়েছিল অসংখ্য শিক্ষার্থী। অসংখ্য আহত এবং গ্রেফতার করা হয়েছিল শত শত শিক্ষার্থীকে। স্বৈরশাসকের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী দ্বারা সেদিন গুম করা হয়েছিল অনেক শিক্ষার্থীর লাস। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে অবশেষে শিক্ষামন্ত্রী ড.মজিদ খানের করা শিক্ষানীতিটি স্থগিত করা হয়।

সেই বাঙ্গালী আজ ভুলে গেছে তাদের সংগ্রামী অতীত। শিক্ষার্থীদের কাছে আজ অজানা সেই স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের ইতিহাস। ফলে এই প্রজন্মের সংগ্রামী করতলে আজ উঠেছে গোলাপ আর চোখে-মুখে শুধু ভালবাসার ছাপ। অথচ সেদিন তাদের করতলে ছিল বিপ্লবী প্ল্যাকার্ড আর চোখে-মুখে ছিল কেবল প্রতিবাদের ঝলক!

কেন হয়েছিল এই রক্তক্ষয়ী আন্দোলন?

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের পরপরই তাকে ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে। স্বৈরশাসক তখনি বুঝে যায় শিক্ষার্থীদের এই লড়াই তার জন্য সুদিন বয়ে আনবে না। ফলে শুরু হয় ধরপাকড়। প্রথমদিনেই কলাভবনে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগাতে গিয়ে গ্রেফতার ও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন ছাত্রনেতা শিবলি কাইয়ুম, হাবিবুর রহমান ও আব্দুল আলী।

সে সময় সামরিক সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খান ক্ষমতায় এসেই নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব ও রেজাল্ট খারাপ হলেও যারা ৫০% শিক্ষার ব্যয়ভার দিতে সমর্থ, তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয় সেই নীতিমালায়। এই নীতিতে দরিদ্ররা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে পারে বলে ছাত্ররা এর প্রবল বিরোধিতা করে। ১৯৮২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসে এই শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ছাত্র সংগঠনগুলো ঐকমত্যে পৌঁছে।

ফলে মজিদ খানের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ৩-দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো:

১। মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল।
২। সকল ছাত্র ও রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তিদান।
৩। সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

সেদিন যা ঘটেছিল:

সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মিলিত হন। তারপর হাজার হাজার শিক্ষার্থীর এই শান্তিপূর্ণ মিছিলটি হাইকোর্টের গেটের ব্যারিকেডের সামনে বসে পড়ে এবং ছাত্রনেতারা সেখানে বক্তৃতা শুরু করেন। এসময় পুলিশ বিনা উস্কানিতে তারের একপাশ সরিয়ে রায়ট কার ঢুকিয়ে দিয়ে রঙ্গিন গরম পানি ছিটাতে থাকে, বেধড়ক লাঠিচার্জ, ইট-পাটকেল ও বেপরোয়া গুলি ছুড়তে শুরু করে। গুলিবিদ্ধ হয় জয়নাল। এরপর গুলিবিদ্ধ জয়নালকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়।

এছাড়াও সেদিন জাফর, মোজাম্মেল, আইয়ুব, দিপালীসহ অনেক শিক্ষার্থী নিহত এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত ও গ্রেফতারের শিকার হন। এই ঘটনার জোয়ার লাগে চট্টগ্রাম শহরেও। মেডিক্যাল ও অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশ লাঠি চার্জ ও গুলি চালালে নিহত হয় কাঞ্চন। অবশেষেশে ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের তিনটি মৌলিক দাবির মুখে স্থগিত হয় কুখ্যাত সেই শিক্ষানীতি।

২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সালের পর এই আন্দোলনই ছিল ইতিহাসে লিখে রাখার মতো ছাত্র নির্যাতন ও নিপীড়নের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তা স্বত্বেও ইতিহাসের পাতা থেকে হারাতে বসেছে শিক্ষার্থীদের বিপ্লবী ইতিহাস ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’।

অথচ সেদিন শিক্ষার্থীদের সংগ্রামের ফলে উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীভূত হয়ে ফিরে এসেছিল সমতা। শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিল স্বৈরাচারের চাপিয়ে দেয়া কোন অনৈতিক সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত নন তারা। কেননা তাদের আছে বৈষম্য দূরীভূত করে সমতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী ইতিহাস। ফলে সেই সংগ্রামী চেতনা বলেই সেদিন রাজপথে জীবন দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল বিপ্লবী সেই শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক মোহাব্বত হোসেন মিলন বলেন, ভালোবাসা দিবসে এ রকম একটা হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল,তা এ প্রজন্মকে স্মরণ করাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ইতিহাসে অনেক ঘটনা আছে,পরবর্তী প্রজন্ম ভুলে গেলেও তারও পরবর্তী প্রজন্ম আবার খুঁজে বের করে। কাঞ্চন-দিপালীরা গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সেদিন জীবন দিয়েছিলো।

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এসে আমরা দেখছি জয়নাল, দিপালী, কাঞ্চনদের সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে। বর্তমান সময়ে শিক্ষা আরো বানিজ্যিকরূপ লাভ করেছে। একদিকে বেতন ফি, ভর্তি ফি, সেমিস্টার ফি ক্রমাগত বেড়েই চলছে। আবার নেওয়া হচ্ছে নামে বেনামে বিভিন্ন উন্নয়ন ফি অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বানিজ্যিক সান্ধ্যকোর্সের নামে সার্টিফিকেট বিক্রির দোকান খুলে বসেছে। যার ফলে ধ্বংস হচ্ছে শিক্ষার গুণগত মান। ফলে স্বায়ত্তশাসানের বদলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্র।

তিনি বলেন, ইতিহাস কখনো হারায় না,তাকে হারিয়ে ফেলার পরিবেশ তৈরি করা হয়। সুতরাং এই দিনে বাঙ্গালীর সংগ্রামী ইতিহাসকে কোনভাবেই বিদেশি সংস্কৃতি উদযাপনের মিছিলে হারিয়ে যেতে দেয়া উচিত হবে না। শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীভূত করা সংগ্রামী এই দিবসটি গুরুত্ব ও তাৎপর্য তারুণ্যের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন